শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত কৃষকদের জনজীবন !

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ৩৬ বার পঠিত হয়েছে

ঠাকুরগাঁওয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত কৃষকদের জনজীবন !
মোঃ মজিবর রহমান শেখ,
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেউরঝাড়ী সীমান্তবর্তী নাগর নদীর অদুরে শীত উপেক্ষা করে মহিষ দিয়ে হালচাষ করছেন চাষিরা।
১০ দিন ধরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জনজীবন পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। হিমেল হাওয়ায় বোরো আবাদের জন্য জমিতে কাজ করাই দায় হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন এখানকার কৃষকরা। জেলেদের ভাষ্য মাছ ধরার জন্য নদীতে নামার সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। রিকশা বা মোটরবাইক চালিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণে। এ দিকে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, রাণীসংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শিশু ও বয়স্করা ঠাণ্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ঠাণ্ডার কারণে গবাদি পশু-পাখিদের নিয়েও বিপাকে আছেন মালিকরা। বিশেষ করে প্রচণ্ড কুয়াশায় ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়,দিনাজপুর জেলায় বসবাসকারী লোকদের গবাদিপশু নিয়ে কষ্টের শেষ নেই। সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে জীর্ণশীর্ণ ভাঙাচোরা টিনের ঘরে বসবাসকারী অসহায় ও খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণীর লোকদের। ঠাণ্ডা এত বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে গরম পোশাকের কদর। দামও তুলনামূলক অনেকটা বেড়েছে বলে জানান সাধারণ ক্রেতারা। ঠাকুরগাঁও জেলার আশে পাশ্বের জেলাগুলোতে বেশ কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গত ১০দিন ধরে হিমশীতল আবহাওয়ায় টেকা দায় হয়ে পড়ে। গত ১৫ জানুয়ারী সোমবার ঠাকুরগাঁও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস । ইতঃপূর্বে এতটা ঠাণ্ডা আর কখনো পড়েনি বলে পরিস্থিতি মোকাবেলার পূর্ব প্রস্তুতি অনেকেরই ছিল না। খেটে খাওয়া মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ। দৈনন্দিন কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।৷ আটদিন ধরে দিনের আকাশে সূর্যেরও দেখা মিলেনি ঘনকুয়াশার কারণে। শিশু শিক্ষার্থীরা সাত সকালে ঠাণ্ডার কারণে ঘর থেকে বেড়িয়ে পাঠশালায় যেতে সাহস করছে না।
তেতুঁলিয়া আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, গত সোমবার পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যেমনটি ইতঃপূর্বে এই অঞ্চলে কখনো ঘটেনি। দেশের ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অব্যাহত রয়েছে বলে আবহাওয়ার গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে এই প্রথম এত কম তাপমাত্রায় রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবারে ঠাকুরগাঁওয়ে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। সোমবারে ঠাকুরগাঁও তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়িয়া গ্রামের খসিরু ইসলামের ছেলে মাসুদ বলেন, রাতের বেলায় ঘনকুয়াশায় রাস্তায় কিছু দেখা যায় না। কয়েক হাত দূরের গাড়ি পর্যন্ত চোখে পড়ে না। ঠাণ্ডা বাতাসে হাতে পায়ে কাঁপুনি ধরে। গাড়ির হ্যান্ডেল ধরে রাখা যায় না। তাই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। মেইন রাস্তা দিয়ে ক’দিন আগে রাতের বেলায় তিন চাকার ভ্যানে করে বালিয়াডাঙ্গী থেকে বাড়ী ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনায় রাস্তার পাশের গর্তেও পড়ে যান। এ সময়ে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন বলে জানা গেছে। এরপর থেকে কুয়াশায় আর গাড়ি চালাইনি। তবে দুশ্চিন্তায় আছেন এভাবে ক’দিন চলবে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী বেউরঝাড়ী গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, নাগর নদী ধারের অদুরে গ্রামের বাড়িতে থাকি। ঘন কুয়াশায় চোর ডাকাতেরও ভয় থাকে। শীতের কুয়াশায় সংকর জাতের গাভী ও বাছুরটির ঠাণ্ডা লেগে গেছে। দুধ কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থাকলে পশু পালন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। মুরগির ছানাও ঠাণ্ডায় মরে যাচ্ছে। বড়বাড়ি গ্রামের আলী বলেন, কনকনে শীতের মাঝেও কৃষি কাজ করে আসতে ভিশন কষ্ট হয়। বামুনিয়া গ্রামের হোসেন জানান, এই ঠাণ্ডায় হাওরে মাছ ধরতে পানিতে নামার সাহস পাচ্ছেন না। বদ্ধ জলাশয় ও নদীর পানি বরফের মতোই অনেকটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
এ দিকে শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা রোগও। এভাবে দীর্ঘ দিন থাকলে গরিবের অভাবও দেখা দিবে। উষ্ণ কাপড় না থাকায় অনেকে আবার খড়কুটো পুড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার বিত্তশালীদের দিকে তাকিয়ে আছেন একটুখানি গরম কাপড়ের আশায়। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের মহিষমারী গ্রামের সোহেল জানান, এই শীতে ভাঙা ঘরে মাটিতে খড়ের উপরে থেকে খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছি। কেউ আমাদের সহযোগিতায় এই পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি। লাহিড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে শিক্ষাথীর উপস্থিতি অর্ধেকে নেমে এসেছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডা: সজীব বলেন, বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতালে গত মাসের চেয়ে এ মাসে ১০ থেকে ১২ শতাংশ ঠাণ্ডাজনিত রোগী বেড়েছে। এ ছাড়াও আউটডোরে প্রতিদিন ১০০-২০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে বলেও তিনি জানান। তেতুঁলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, আগামী আরো দুই দিন একই অবস্থা বিরাজ করবে। তা ছাড়া চলতি সপ্তাহে এই অঞ্চলে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির পরে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হবে বলে গবেষণায় আশা করা যাচ্ছে।

মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
০১৭১৭৫৯০৪৪৪

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর