ঢাকার রায়েরবাগের কদমতলী থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে গুরুতর আহত আল-আমিন কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতের যন্ত্রণা। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে করছেন মানবেতর জীবনযাপন।
আহত আল-আমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের রাইতলা গ্রামে মৃত একিন আলীর ছেলে। ছয় ভাই আর এক বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। আল-আমিন চার সন্তানের জনক। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
পরিবার প্রায় ২ লাখ টাকা ধার-দেনা করে প্রাথমিক চিকিৎসা করালেও অর্থাভাবে হাসপাতাল থেকে চলে আসতে হয়। বাহির থেকে ক্ষত শুকালেও পেটের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি। প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার ওষুধ লাগে তার। এ পর্যন্ত কেউই নেয়নি তার খবর। গ্রামের মানুষের সাহায্যে চলছে তার পরিবার।
টাকার অভাবে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। নতুন করে দেখা দিয়েছে আল-আমিনের হার্নিয়া নামক একটি রোগ। চিকিৎসক জানিয়েছে অপারেশন করতে হবে। টাকার অভাবে অপারেশনও করতে পারছেন না। সরকারি সহযোগিতায় তার পূর্ণ চিকিৎসাসহ তাকে আর্থিক সহায়তার আবেদন করেন গ্রামবাসী।
গ্রামের বাড়িতে শুয়ে থাকেন আল-আমিন। মাঝে-মধ্যে ঘরের বাইরে গিয়ে বসেন। কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতের যন্ত্রণা।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে আল-আমিনের বাড়িতে গেলে তিনি আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার আদ্যোপান্ত জানান।
তিনি বলেন, রায়েরবাগ কদমতলী থানার সামনে ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই রাত আটটার দিকে পুলিশের গুলিতে আহত হই। ছাত্র ভাইয়েরা একজন ভ্যানচালক দিয়ে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা করতেও ভয় পেয়েছি। পুলিশ আবার ধরে নিয়ে যায় কিনা আতঙ্কে ছিলাম। পরিবার ঋণ করে চিকিৎসা করিয়েছে। বাড়িতে আসার পর কেউ কোনো খবর নেয় না। টাকার অভাবে ছেলে-মেয়েদের স্কুলেও ভর্তি করাতে পারছি না। আমি সরকারসহ সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
আহত আল-আমিনের স্ত্রী সোহেদা আক্তার বলেন, কিছু টাকা-পয়সা ছিল, সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। এখন হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। তার ওপর আবার আমার স্বামীর আরো একটি নতুন রোগ দেখা দিয়েছে। তারও চিকিৎসা করতে পারছে না। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না পেলে চারটি বাচ্চা নিয়ে চলতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করি।
আল-আমিনের প্রতিবেশী জালাল মিয়া, মামুন মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, আল-আমিন ঢাকায় সেলুনে কাজ করত। ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তার কিছু টাকা-পয়সা ছিল, তাও শেষ হয়ে গেছে। কাজকর্ম করতে পারছে না। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে চলতে হচ্ছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি। বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে সে।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার Max tv bdকে বলেন, যারা আহত আছে তাদের তালিকা ইতোমধ্যে প্রেরণ করেছি। সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে। যারা আহত আছেন ও নিহত হয়েছে সরকারি বিধি মোতাবেক সহযোগিতা করা হবে।