রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২০ অপরাহ্ন

দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ৩ চিকিৎসক!

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৭২ বার পঠিত হয়েছে
ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের অপেক্ষা। ছবি : Max tv bd

চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। সকাল থেকেই তারা এসেছেন দূরদূরান্ত থেকে। তাদের মধ্যে গরিব ও অসহায় রোগীও আছেন। তারা এসেছেন বিনামূল্যে চিকিৎসা আর ওষুধের জন্য। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে দুর্ভোগে পড়েন তারা। এমন চিত্র কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।

৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জনবল সংকটের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, টেকনোলজিস্ট এবং কর্মচারী না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ।

জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১৭ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে দীর্ঘদিনেও অবকাঠামো ও সেবার মানে কোনো উন্নয়ন হয়নি।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, সরকারি বিধিমোতাবেক ১৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন তিনজন। এ ছাড়া অভাব রয়েছে নার্স, এক্স-রে টেকনিশিয়ান, রেডিও টেকনিশিয়ান আলট্রাসাউন্ড চিকিৎসক, দন্তচিকিৎসক, হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনারসহ একাধিক পদ থাকলেও এখন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেও সংকট মেটানো যাচ্ছে না। এতে কেউই কাঙিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না। এর মধ্যে কেউ ছুটিতে গেলে পুরো বিভাগই বন্ধ থাকে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কৃষ্ণ জানান, হাসপাতালে ভালো ডাক্তার নাই, ভালো ডাক্তার থাকলে কিশোরগঞ্জ শহরে যেতে হতো না। এই হাসপাতালে ওষুধও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। একটা পাওয়া গেলেও আরেকটা কিনতে হয় বাইরে থেকে।

শিক্ষার্থী সাকার হোসেন বলেন, হাসপাতালে এমনিতেই জনবল সংকট। তার ওপর আবার প্রধান কর্মকর্তা নিয়মিত হাসপাতালে থাকেন না। হাসপাতালে মানুষ আসেন সুস্থ হওয়ার জন্য কিন্তু এখানে এসে উল্টো অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। আমরা কবে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো?

সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের স্টাফ শারমিন বেগম জানান, হাসপাতালে এলে চিকিৎসকের অভাবে সঠিকভাবে সেবা পাওয়া যায় না। উপজেলায় হাসপাতাল থাকার পরও চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে হয়। দ্রুত ওষুধসহ জনবল সংকট মেটানো দরকার।

অভিযোগ বিষয়ে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবুল কালাম বলেন, সেবার মান ভালো দিতে হলে সঠিক জনবল দরকার। আমি যে পোস্টে কাজ করি, এই পোস্টে ১১ জন লোক থাকার কথা কিন্তু মাত্র আছে ৩ জন। ছুটিতে গেলে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকে। যার জন্য কেউ ছুটিতে যাওয়া হয় না। এই হাসপাতালে অতিদ্রুত জনবল বৃদ্ধি করা দরকার।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ বলেন, হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই তিনজন স্টাফ নার্স দিয়ে জরুরি বিভাগ চালাচ্ছি, যা আমাদের জন্য কষ্টকর। আমরা কোনো সরকারি ছুটি কাটাতে পারি না কারণ ছুটিতে গেলে জরুরি বিভাগে মানুষ চিকিৎসা পাবে না। এই সমস্যাগুলো ওপর মহলে চিঠি লিখেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আধুনিক মেশিন থাকার পরও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে এক্স-রে মেশিনের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অতিশ দাস রাজীব বলেন, হাসপাতালে জনবল বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেকবার চিঠি লেখা হয়েছে কিন্তু এখনো জনবল পাওয়া যায়নি। জনবলের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। তাই গর্ভবতী নারীদের নিয়ে বাধ্য হয়ে শহরে যেতে হয় স্বজনদের। জনবল সংকট মেটানো সম্ভব হলে সেবার মান আরও বাড়বে।

তবে নিজের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটিতে ছিলাম।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর