সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩০ অপরাহ্ন

চরম শত্রু থেকে যেভাবে পরম বন্ধু হলো রাশিয়া ও ইরান..

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৩৯ বার পঠিত হয়েছে
ছবি : সংগৃহীত

নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে রাশিয়া ও ইরানের সম্পর্ক। শুক্রবার বন্ধুপ্রতীম দেশ দুটি ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে সই করেছে। এরপরই নতুন করে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্ম হয়েছে। বর্তমানে মিত্র এই দুই দেশ এক সময় ছিল পরস্পরের চরম শত্রু। এমনকি দুই দেশের মধ্যে কয়েক বার যুদ্ধও হয়েছে। রাশিয়াকে নিয়ে ইরানের বেদনাদায়ক স্মৃতিও রয়েছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে সে রাশিয়াই হয়ে উঠেছে ইরানের পরম মিত্র।

আঠারো ও উনিশ শতকে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়ায় রাশিয়া ও ইরান। পার্সিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ককেশাস ও কাস্পিয়ান অঞ্চলের বিস্মৃত অঞ্চলও দখল করে নেয় রাশিয়ান সাম্রাজ্য। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রাশিয়ার সৈন্যরা উত্তরাঞ্চলীয় ইরানের বড় অংশ দখল করে দেয়। কিন্তু ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের কারণে সেখানে রাশিয়ার উপস্থিতির ইতি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইরানে হামলা করে বসে, যা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় তেহরানকে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইরানের অবস্থান ছিল রাশিয়ার বিপরীতমুখী। তখন ইরানে শাহদের শাসন ছিল, যারা ঐতিহাসিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর ছেদ ঘটে সেই সম্পর্কের। বিপ্লবীদের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির ভাষায়- যুক্তরাষ্ট্র ছিল বড় শয়তান আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল ছোট শয়তান। তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর উষ্ণ হতে শুরু করে রাশিয়া-ইরানের সম্পর্ক।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা ইরানের পাশে এসে দাঁড়ায় রাশিয়া। তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারের পাশাপাশি হয়ে ওঠে অস্ত্র ও উন্নত প্রযুক্তির জোগানদাতাও। এমনকি ইরানের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও তৈরি করে দেয় রাশিয়া, যেটি ২০১৩ সাল থেকে সক্রিয় রয়েছে। ইরানকে আরও দুটি পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করে দিতে পরবর্তী বছর চুক্তি করে রাশিয়া। এছাড়া ছয় জাতির সঙ্গে হওয়া ইরানের পরমাণু চুক্তিতে রাশিয়াও ছিল।

সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হলে বাশার আল আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে এক জোট হয় রাশিয়া ও ইরান। ২০১৫ সালে রাশিয়া সরাসরি এই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এতে আগে থেকেই ময়দানে থাকা ইরান ও তাদের প্রক্সিরা হালে পানি পায়। শেষ পর্যন্ত সিরিয়ায় টিকে যায় বাশার আসাদ সরকার। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকায় মস্কোর নজর সিরিয়া থেকে সরে যাওয়ায় একা হয়ে পড়ে ইরান। আর সে সুযোগকে কাজে লাগায় বিদ্রোহীরা। পতন ঘটে আসাদ সরকারের।

পশ্চিমারা সেই ২০২২ সাল থেকে অভিযোগ করে আসছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ১৭০ কোটি ডলারের শাহেদ ড্রোন দিতে চুক্তি করেছে তেহরান-মস্কো। এমনকি রাশিয়াকে ইরান স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল সরবরাহ করেছে বলেও অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও এ নিয়ে মস্কো বা তেহরান কেউই মুখ খোলেনি। আবার ইরানে দুই বার চালানো ইসরায়েলের সরাসরি হামলায় রাশিয়ার সরবরাহ করা এস-300 আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই বাঁচিয়েছে তেহরানকে।

তেহরানের নজর রয়েছে রাশিয়ার দূরপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক এসইউ-৩৫ ফাইটার জেট ও অন্যান্য অস্ত্রের দিকে। কিন্তু ইরানকে এ পর্যন্ত মাত্র বেশ কয়েকটি ইয়াক-১৩০ ট্রেইনার জেট দিয়েছে রাশিয়া। এমতাবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসনে বসার ঠিক আগে বহুল প্রতীক্ষিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সম্পন্ন করল রাশিয়া ও ইরান।

নতুন এই চুক্তির মেয়াদ বিশ বছর। এর ফলে বাণিজ্য, সামরিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়বে দুই দেশের মধ্যে। এছাড়া উভয়ই তাদের জাতির ওপর আক্রমণকারীকে কোনো সহায়তা প্রদান করবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- একে অন্যের ওপর সামরিক হুমকি মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে মস্কো ও তেহরান।

এদিকে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে ইরানের চুক্তিটি মূল্যায়ন করতে পারে পশ্চিমারা। কারণ, দুই দেশের যুদ্ধ প্রস্তুতি আরও জোরালো হবে এবং অন্তিম মুহূর্তে মিলেমিশে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে দায়বদ্ধ থাকবে ইরান ও রাশিয়া। দুই শক্তির এই মিলন তাই আতঙ্ক হিসেবেই দেখবে শত্রুরা।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর