বর্ষায় লাখ লাখ পর্যটকের আগমনে মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর আজ পর্যটকশূন্য। আগে এমন সময়ে (শীত মৌসুমে) হাওরের পাখি ও মাছের টানে পর্যটকদের দেখা মিলত। বর্তমানে পাখি ও মাছ কমে যাওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে প্রকৃতিপ্রেমীরা। এর আরেকটি কারণ হাওরপাড়ের নদীগুলোর পানি কমে যাওয়ায় পর্যটকবাহী হাউজবোটগুলো সহজে চলাচল করতে পারে না। তাই পর্যটকদের আসতে অনীহা বলেও জানা গেছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরসহ তাহিরপুরের পর্যটন স্পটগুলোকে কেন্দ্র করে পাঁচ শতাধিক নৌকা বা হাউজবোটের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব হাউজবোটে প্রায় দুই হাজার মাঝি ও শ্রমিক কাজ করেন। এমন সময় পর্যটক শূন্যতার কারণে জীবিকার তাগিদে মাঝি ও শ্রমিকরা কৃষি কাজ ও মাছ ধরা মতো কাজে লিপ্ত হয়েছেন। এ ছাড়া কেউ কেউ মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, সিএনজি চালাচ্ছেন। কেউবা আবার নেমে পড়েছেন বিভিন্ন মৌসুমি ব্যবসায়।
তাহিরপুর বাজারের মুদি মালের ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, হাওরে পর্যটকরা আসলে বাজার জমে উঠে। তারা নৌকায় উঠার আগে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেন। বাজারের প্রত্যেকটা দোকানে ভালো বিক্রি হয়। এখন পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা অনেক কমে গেছে।
পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা নীলাদ্রীর পাড়ের দোকানি বলেন, এই সিজনে পর্যটক না আসায় দোকান বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে যেতে হয়। বর্ষা সিজনে আমার দোকানের পাশেই ঘাটে শত শত নৌকায় পর্যটকরা আসেন। সেই সময় অনেক বেচাকেনা হয়।
শিকারা হাউজবোটের মালিক ও হাউজবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর ইশতি বলেন, হেমন্তে পর্যটক না আসায় হাউজবোটে কোনো কাজ থাকে না। এই সিজনে লাখ লাখ টাকা মূল্যের হাউজবোটগুলো বেকার থাকে। মাঝিদের দায়িত্বে তাদের ঘাটে বেধে রাখতে হয়। এই সময় টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউজবোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।
সুনামগঞ্জ হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসাইন আকন্দ বলেন, তাহিরপুরে টাঙ্গুয়ার হাওর এখন অফ সিজন। বর্ষায় পাঁচ-ছয় মাস হাউজবোট কেন্দ্রিক তাহিরপুর পর্যটন মৌসুম ধরা হয়। নভেম্বর পর্যন্ত হাওরের নদী পথে হাউজবোট চালানো যায়। এর পরে পানি অনেক কমে যায়, ফলে নদীপথে হাউজবোট চলাচলে সমস্যা হয়। অক্টোবর মাসের শেষ থেকে হাওরেও পানি থাকে না। অনেক ঘুরে টাঙ্গুয়া যেতে হয় বলে পর্যটকরা যেতে আগ্রহী হন না। পর্যটকদের আনাগোনা এখন বলতে গেলে নাই।
তিনি বলেন, হাওর পাড়ের নদীগুলো ভালোভাবে খনন করে হেমন্তে হাউজবোট চলাচল উপযোগী করলে এবং শীতকালে টাঙ্গুয়ায় ভিন্ন রূপ সৌন্দর্য নিয়ে প্রচার হলে পর্যটকদের আগমন বাড়তে পারে।
তাহিরপুর উপজেলা নৌ-পর্যটন শিল্প সমিতির সভাপতি রব্বানী বলেন, নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হেমন্ত ৬ মাস পর্যটক আসেন না হাওরে। এখন নৌকাগুলো ঘাটে বাঁধা রাখতে হয়। মাঝি শ্রমিকরা বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হাসেম বলেন, এই মৌসুমে হাউজবোটে টাঙ্গুয়ার হাওরে যাতায়াত করা অনেক দূরবর্তী হয়ে যায়। যার কারণে এই সময় পর্যটকরা হাওরে আসনে না। হেমন্তে তাহিরপুরকে পর্যটকমুখী করতে টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। হাওরের পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় ও আগত পর্যটকদের সহযোগিতা কামনা করছি।