মোঃ জমির হোসেন,স্টাফ রিপোর্টারঃ-
যশোর জেলার শার্শা উপজেলাধীন নাভারণ বাজারে অবস্থিত “সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার” এ বর্ষা খাতুন (২০) নামের এক প্রসূতি অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি যশোর সদর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু’র শঙ্কায় প্রহর গুনছেন। বর্ষা খাতুন বেনাপোল পোর্ট থানার রঘুনাথপুর গ্রামের শহিদুল্লাহ মল্লিকের স্ত্রী।
ভুক্তভোগীর স্বামী শহিদুল্লাহ মল্লিক জানান, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে এলাকার হাটখোলার পল্লী চিকিৎসক রনকের পরামর্শে “সেবা ক্লিনিক” এ নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিয়ে আসছিলেন। তাকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন রনজু আহমেদ নামে একজন ডাক্তার। সোমবার (৩১ জুলাই) রাতে বর্ষা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে সেবা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার সিজারিয়ান করেন ডাক্তার সন্দিপ পাল। পরদিন মঙ্গলবার রোগীর অবস্থার অবনতি হলে, ওই দিন রাতেই রোগীর স্বজনরা তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে জানানো হয় রোগী অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় অপারেশন করে আইসিইউতে প্রেরণ করা হয়।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট মনিরুজ্জামান লর্ড জানান, অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন ওই রোগী। তার পেটের একাধিক অর্গান ছিড়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, তার প্লীহা কিছুটা কেটে বাদ দিতে হয়েছে।
এদিকে,খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, “সেবা ক্লিনিক” এ রনজু আহমেদ নামে যে ব্যক্তির কাছে চিকিৎসা নিয়ে আসছিলেন বর্ষা খাতুন, ঐ রনজু আহমেদ আদতে কোনো ডাক্তারই না। তিনি নিজের নামের আগে ডাক্তার লিখে রোগী দেখছেন। ডিগ্রি ব্যবহার করছেন ডিএমএফ। অথচ সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই এমবিবিএস ডিগ্রি থাকতে হবে।
শুধু তাই নয়, এ প্রতিষ্ঠানে কোনো অজ্ঞান ডাক্তার নেই। অপারেশন কক্ষে “ওটি বয়” রোগীকে অজ্ঞান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের প্যাথলজি রিপোর্টে কোনো কনসালটেন্ট বা মেডিকেল অফিসারের স্বাক্ষর নেই। রিপোর্ট ছাড়ছেন এম এ কে এসকে সুমন নামে ল্যাব টেকনোলজিস্ট।
ঐ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নাসিম রেজা জানান, তার প্রতিষ্ঠানে কোনো অপচিকিৎসা হয়নি। রোগীর স্বজনরা তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র না নিয়েই সরকারি হাসপাতালে চলে গেছেন।
কথিত ডাক্তার রনজু আহমেদ তার প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখেন কি না জানতে চাইলে, তিনি শারীরিক অসুস্থ বলে ফোন রেখে দেন। যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ঐ প্রতিষ্ঠানে আগেও একবার অভিযান পরিচালনা করে সিলড করা হয়েছে। রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।