সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

আঁষাড় গিয়ে শ্রাবণ চলছে বৃষ্টির দেখা নেইঃ আমন চাষে চিন্তিত চাষিরা

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩
  • ৬২ বার পঠিত হয়েছে

মোঃ জমির হোসেন স্টাফ রিপোর্টারঃ-                  শুরু হয়েছে রোপা আমন চাষের মৌসুম, অথচ প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা নেই, অধিকাংশ কৃষক সেচ দিয়ে চারা রোপণ শুরু করেছেন। স্যালো এবং ডিপ টিউবওয়েল এখন তাদের একমাত্র ভরসা, রোপা আমন চাষ নিয়ে রীতিমতো হতাশায় রয়েছেন তারা। যশোর জেলার শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ঘুরে কৃষকেরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

তাদের মতে,প্রত্যাশিত বৃষ্টি না হলে জমি পতিত থাকার শঙ্কা রয়েছে। শার্শা কৃষি দপ্তর থেকে জানা গেছে, এ বছর অত্র উপজেলায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি,এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে, বাকিটা শ্রাবণের মধ্যে রোপন হয়ে যাবে। গত বছর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি, চাষ হয়েছিল ২১ হাজার ১৪২ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল ৭৭ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন ধান। কৃষকরা বলছেন, বাড়তি খরচের কারণে এ বছর পরিত্যক্ত থাকবে অনেক জমি। অবশ্য কৃষি বিভাগের দাবি, সম্পূরক সেচ দিয়ে হলেও রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে।

পাশাপাশি কৃষকের অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি সহনীয় করতে উদ্যোগ নেয়া হবে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাধারণত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে রোপা আমন চাষে নামেন চাষিরা। কিন্তু চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শায় বৃষ্টি হচ্ছে না বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমেছে। ফলে জমিতে বৃষ্টির পানি না জমায় রোপা আমন আবাদ ঠিকমতো শুরু করতে পারছেন না চাষিরা। এরই মধ্যে ধান রোপণের সময় এক মাস অতিবাহিত হওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকেই বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন।

কৃষকদের দাবি, এতে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি পরিত্যক্ত থাকবে অনেক জমি। শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছী গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, এ বছর আমন চাষের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। এক মাস আগে চাষ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে চাষ শুরু করেছি। এবার খরচ বাড়বে। প্রায় ইরি ধান চাষের মতো খরচ হবে। এ বছর লাভের আশা করতে পারছি না। আনিছুর রহমান নামে অপর এক কৃষক বলেন, আমরা আমন চাষ করি বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে। এ বছর আকাশে কোনো বৃষ্টি নেই। ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ডিজেল লাগে, বিদ্যুৎ লাগে।

তার দাম বাড়তি, সার-কীটনাশক, বীজ সবকিছুর দাম বাড়তি। এতে এ বছর সেচ দিয়ে আমন চাষ করে লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। বেনাপোলের নামাজ গ্রামের মাহাবুব রহমান নামে আরেক কৃষক বলেন, এ বছর আমন ধান করার জন্য জমিতে তিনবার চাষ দিয়েছি। বৃষ্টি না হওয়ায় তা কোনো কাজে লাগেনি। এখন আবার নতুন করে চাষ দিয়ে সেচের পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণ করছি। এতে খরচ বাড়ছে। তা ছাড়া শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও বা পাওয়া যায়, মজুরি অনেক বেশি। সেচের মূল্যও এবার বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে অনেক ক্ষতিতে আছি। ছোট আঁচড়া গ্রামের তৌহিদ ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকে জমি ছেড়ে দিয়েছেন। আমি পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষ করতাম।

এবার দুই বিঘা করব। তা ছাড়া বিলের মধ্যে কয়েকশ বিঘা জমি রয়েছে। যেখানে সেচের ব্যবস্থা নেই। ফলে এ বছর অনেক জমি পতিত থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। অনাবৃষ্টিসহ নানা কারণে প্রতিবছরই আমনে উৎপাদন খরচ বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় খরচ কমাতে সেচ, সার ও বীজে ভর্তূকির দাবি কৃষকদের। এদিকে কৃষি বিভাগের দাবি, বৃষ্টির পানির অভাব থাকলেও সম্পূরক সেচ দিয়ে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। পাশাপাশি কৃষকের অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি সহনীয় করতে উদ্যোগ নেয়া হবে। শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার সাহা বলেন, “এখনও সময় হাতে আছে। শেষ আগস্ট পর্যন্ত রোপণ করা যাবে।

এ সময়ের মধ্যে কাঙ্খিত বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে আমন রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর ধানের দাম ভালো পেয়েছে কৃষক। সামনে ভালো দাম পেলে বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে চাষাবাদেও ব্যয় বাড়ছে। আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। সরকার কৃষকদের নিয়ে ভাবে। তাদের খরচ সহনীয় করতে ভবিষ্যতে কৃষকদের ভর্তূকির আওতায় আনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ”।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর