বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এবার হাসিনা পতনের পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, বিএনপির যে জনপ্রিয়তা; চাইলে বিএনপি দায়িত্ব নিতে পারত। কিন্তু বিএনপি বলেছে, আমরা তো নেব না, জাতীয় সরকারেও যাব না। ইন্ডিপেন্ডেন্ট লোকেরা রাষ্ট্র পরিচালনা করুক। তাদের নেতৃত্বে নির্বাচন হোক, সেই নির্বাচনে যদি জনগণ সমর্থন দেয় তাহলে বিএনপি দায়িত্ব নেবে। বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতা নেয়নি, আমরাই দিয়েছি। বিএনপি বারবার নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়েছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর নতুন বাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি, অঙ্গসহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিজয় র্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা যে এক দফার লড়াই শুরু করেছিলাম এবং জুলাই-আগস্টে এসে যে এক দফার লড়াইটা হলো সেটা শুধু ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য না, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, এখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ মানুষ হিসেবে আমরা যে যত যোগ্য হই বা না হই রাজনীতিতে সবচেয়ে যোগ্য তারা যাদেরকে জনগণ সমর্থন দেয়। যাদেরকে জনগণ ভালোবাসে, তাদেরকে জনগণ দায়িত্ব দেয়। জনগণ বহু বছর এই সুযোগ পায়নি, তাদের ভোটের অধিকার দেওয়া হয় নাই, বঞ্চিত করা হয়েছে। দ্রুত তাদের এই অধিকার দেওয়া হোক, তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে এবং এই প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসন ছিল, আদালত ছিল, পোস্ট অফিস ছিল, জেলখানা ছিল, শুল্ক আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। একটা স্বাধীন দেশে যা থাকে তার সবকিছু ছিল। তিনি সেই মানুষ যিনি ১৯৭১ সালে ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ বলে দেশের মানুষকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, সেই একই মানুষ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আমি মেজর জিয়া বলছি বলে এ দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করেছিলেন। তিনি জোর করে ক্ষমতা দখল করেন নাই, তাকে সিপাহি জনতা জোর করে ক্ষমতার আবর্তে নিক্ষেপ করেছিল। যেদিন তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেদিন বাংলাদেশে কোনো সংসদ ছিল না। কোনো মন্ত্রিপরিষদ ছিল না, একদিন বয়সী একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন মাত্র। সংকটে জর্জরিত দেশে কেউ যখন দায়িত্ব নিতে সাহস পাচ্ছিল না, সেই দেশে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করে শুধু বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেননি, তিনি সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যম উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ কৃষি, তৈরি পোশাক শিল্প এবং বৈদেশিক কর্মস্থান শহীদ জিয়ার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছিল। ওই সময়ে তলাহীন বাংলাদেশ থেকে শহীদ জিয়ার আমলে জাপানকে পরাজিত করে জাতিসংঘের সাধারণ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। নতুন কলকারখানা স্থাপন, বন্ধ কলকারখানা চালু, সমুদ্রের মাছ শিকার, পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড, কুটির শিল্পের সম্প্রসারণ যাই বলেন সব কিছু হয়েছে শহীদ জিয়ার হাত ধরে।
তিনি আরও বলেন, এ সময় যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছেন এবং অতি সম্প্রতি জুলাই ও আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের সবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন তিনি।