কলেজ শিক্ষার্থী তামিম হোসাইন। তিনি একসময়ে ব্যাট-বল হাতে গ্রামের মাঠে ছুটে বেড়াতেন। এখন বিছানা আর বাড়ির আঙ্গিনায় ছটফট করে দিন কাটাচ্ছেন। একসময়ে তার দু’চোখ ভরা ছিল স্বপ্ন। এখন সে দু’চোখে শুধুই অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তা।
তামিমের বয়স ২৩ বছর। এ বয়সে জীবনের ক্যানভাস থাকার কথা ছিল বর্ণিল। কিন্তু আজ সেটা ফ্যাকাসে, বিবর্ণ।
জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই বেলা ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল ছিল মাদারীপুর পৌর শহরের লেকপাড়।
সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে তামিম। তবে তার বাঁ হাতের তালুর রগ আর একটি আঙ্গুলের গুলি বের করা যায়নি। তার বাঁ হাতটি বলতে গেলে অকেজো হওয়ার পথে। আর্থিক সমস্যার কারণে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছে না তামিমের পরিবার।
আহত তামিমের মা মোসাম্মৎ নাজমা বেগম বলেন, ‘সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা চলে তামিমের। কিন্তু বাঁ হাতের রগে গুলি থাকায় হাতটি অকেজো হওয়ার পথে। এরই মধ্যে কয়েকটি সংগঠন থেকে কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত না। শুনেছি, সরকারিভাবে চিকিৎসা করবে। কিন্তু সেটার কোন প্রতিফলন দেখছি না। আমাদের তেমন আর্থিক সচ্ছলতা নেই। সরকারি সাহায্য খুব দরকার।’
তামিমের স্বপ্ন ছিল ব্যাংকার হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্নে বাধ সেজেছে বাঁ হাতের অক্ষমতা। তামিমের বাবা মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাহেরান্দী গ্রামের মো. আনোয়ার মাতুব্বর। তিনি ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। আনোয়ার মাতুব্বরের দুই মেয়ে আর একমাত্র ছেলে তামিম।
সামান্য আয়ে চলছিল তাদের সংসার। আনোয়ার মাতুব্বরের পক্ষে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব না। বর্তমানে তামিমের চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজন ১০ লাখের বেশি টাকা। তাই এ স্বপ্নবাজ তরুণের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দাবি আহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর।
আর উদীয়মান তরুণ তামিমের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যারা গুলির সামনে নিজেদের বুঁক উচিয়ে কেউ শহীদ আবার কেউবা আহত হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার জন্যে সরকারের এগিয়ে আসা। ‘না হলে অধরাই থেকে যাবে আমাদের স্বপ্ন’ উল্লেখ করেন তামিম।
এদিকে জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, যারা সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সহযোগিতা করা হবে। যদি কেউ আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায়, সেক্ষেত্রেও পুলিশ প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর কোন পুলিশ সরাসরি দায়ী হলে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।