ক্লিনিক কতৃপক্ষ ও ডাক্তার দেলোয়ারের উদাসীনতায় আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে
জামিল আহম্মেদ , পত্নীতলা ( নওগাঁ ) প্রতিনিধি: ডাক্তার ও কতৃপক্ষের উদাসীনতায় সিজারিয়ান রোগী ফাতেমার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর পত্নীতলার ডক্টরস্ ক্লিনিকের মালিকপক্ষ ও সিজারিয়ান ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে।
মৃত ফাতেমার স্বামী ও স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর উপজেলার দক্ষিণ লক্ষণপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী মোছা: ফাতেমা বেগম সিজারিয়ান জনিত কারণে উপজেলার ডক্টরস্ ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। ডক্টরস্ ক্লিনিকসূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ( ৮ সেপ্টেম্বর ) সকাল ৯ টায় ডাক্তার ইজহারুল ইসলাম বাচ্চুর এর এনেস্থিসিয়া ও সহকারী সার্জনে ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন এই অপারেশটি পরিচালনা করেন। কিন্তু এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ অস্বিাকার করে ডা. ইজহারুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আমি এই রোগীকে এনেস্থিসিয়া দেওয়া তো দূরের কথা। এই রোগীকে আমি চোখেও দেখিনি। আমি শুক্রবার সকালে মহাদেবপুর ছিলাম। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের তাদের অপরাধ ধামাচাপা দেবার জন্য আমাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। অপরদিকে মূল সার্জন ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, রোগীটি মারা গেছে এটা আমার জানা নেই। আপনি অপারেশন করেছেন কিন্তু এনেস্থিসিয়া ও সহকারী সার্জন হিসাবে কে দায়িত্ব পালন করেছে এমন প্রশ্ন শুনে সাথে সাথে মুঠোফোনের সংযোগটি কেঁটে দেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুকশর্তে ডক্টরস ক্লিনিক এর একজন স্টাফ বলেন, অপারেশনের কিছুক্ষণপর রোগীটির বিপি খুজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা তাছাড়া রোগীটির পেট ফুলে উঠেছিল। রোগীটি এখানেই মারা যেতো কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কৌশলে রোগীকে রাজশাহী পাঠায়ে দিয়েছে।
মৃত ফাতেমা আক্তার এর স্বামী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার স্ত্রী ফাতেমা আক্তারের পেটে ব্যাথা উঠে রাত প্রায় দুটায়। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে সেই রাতেই প্রদীপ এর সাথে কথা বলে তার ক্লিনিক ডক্টরসে ভর্তি করাই। কারণ সেখানে ডাক্তার বাচ্চু স্যারের বাসা। কিন্তু তারা রাতে অপারেশনের নামে ভর্তি করাই কিন্তু রাতে অপারেশন হয়নি। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি কখন বাচ্চু স্যার আসবে আর অপারেশন করবে। তখন বাজে সকাল প্রায় ০৮ টা। আমি বলি ভাই ডাক্তার বাচ্চু স্যার কখন আসবে আর অপারেশন কখন হবে। ঠিক তখনই প্রদীপ বলে দাদা এই মাত্র অপারেশন হয়েছে। এই তো অপারেশন করে চলে যাচ্ছে ডাক্তার দেলোয়ার স্যার। চিন্তার নেই এখন বাচ্চা রোগী দুজনই সুস্থ আছে। তখন প্রায় ১২ টা বাজে। আমি আমার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বসতেই দেখি যে, তার পায়ে রক্ত। আমি বললাম কি ব্যাপার অপারেশনের পর কি রক্ত পরিষ্কার করেনি। আমি আমার স্ত্রীর পা সরিয়ে দেখি পুরো বেড রক্তে ভরে গেছে। আমি চিৎকার করলে ক্লিনিকে দায়িত্বরত স্টাফরা এসে। পরবর্তীতে সবকিছু দেখে প্রদীপ আমাকে বলে দাদা সামান্য একটু সমস্যা হয়েছিল এখন আর সমস্যা নেই। তার কিছুক্ষণ পর দেখি আমার স্ত্রীর সমস্যা আরো বেশি হচ্ছে, আমার চোখের সামনে পেট ফুলে যাচ্ছে। এমন অবস্থা দেখে কোথা থেকে এক মহিলা ডাক্তার কে নিয়ে আসে এবং সেই মহিলা ডাক্তার আমার স্ত্রী কে দেখে আমাকে বলেন, দুই ব্যাগ রক্ত রেডি করেন দ্রুত আর এখনি গাড়ি ভাড়া করে রাজশাহী নেই। আপনার রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। এখানে একব্যাগ রক্ত চলমান অবস্থায় গাড়িতে উঠায় রাজশাহীতে পৌঁছানোর পর পরবততী একব্যাগ রক্ত দেবার সময়টা আর পাইনি। কষ্ট একটি জায়গায় আমার স্ত্রীর অপারেশন কোন ডাক্তার করলো সেটাই জানতে পারলাম না। অপারেশনের পর অন্তত কিছু সময় রোগীকে স্টাফ দ্বারা পর্যবেক্ষণে রাখবে সেটাও করেনি। যদি তাই করতো তাহলে পুরো বেড রক্তে ভরে যেতোনা। আমি চেয়েছিলাম বাচ্চু স্যার অপারেশন করুক কিন্তু তারা দেলোয়ারের দ্বারা অপারেশন করিয়েছে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখি ডাক্তার দেলোয়ার কোন রকম করে এমবিবিএস শেষ করেছে। বিসিএস পর্যন্ত নয়। তার মতো একজন ডাক্তার আমার স্ত্রীর অপারেশন করেছে এইটা মানতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমার স্ত্রী মারা যাবার পর ক্লিনিক মালিক প্রদীপ আমাকে বলছে, দাদা আপনার স্ত্রীর বিপি বেশি ছিলো, তাছাড়া রোগী মোটা ছিল প্রচুর পরিমানে চরব ছিলো। আমার প্রশ্ন আমার স্ত্রীর এতো সমস্যা তাহেেল তারা কেন আমাকে বললো না। অনেক সময় পেয়েছিলাম , আমি রাজশাহী তে নিতাম। এক কথায় বলা যায় ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আমার স্ত্রী মারা গেছে। এদের সবাই কে আইনের আওতায় নেওয়া উচিত যাহাতে আমার স্ত্রীর মতো আর কারো যেন মৃত্যু না হয়।
এলাকার সুধিসমাজরা বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি, ঘটনাটি শুনার পর আমরা অবাক হয়েছি। তারা অপারেশনের নামে একজন কে হত্যা করলো আবার সেই অপরাধ ধামাচাপা দেবার জন্য বিভিন্ন ধরণের হুমকি ও প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন ও ডক্টরস্ ক্লিরিক কে অবানচিত ঘোষণা করা হোক। আমরা আর কোন মা বোন কে হারাতে চাইনা।
এবিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমিও বিষয়টি শুনেছি। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। যদি কোন অভিযোগ আসে তাহলে তদন্ত অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জামিল আহম্মেদ
পত্নীতলা ( নওগাঁ ) প্রতিনিধি
মোবাইল নাম্বার: ০১৫৮০-৭৬১৮৯৪