মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

২০টি ভয়ংকর জে-১০ যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ, খরচ ২৭ হাজার কোটি

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৭ বার পঠিত হয়েছে
জে-১০ সি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) আধুনিকীকরণ ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা।

সরকারি নথি অনুযায়ী, যুদ্ধবিমানগুলো কেনা, প্রশিক্ষণ, যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে ২০২৭ সালের মধ্যে। প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ করা হবে ১০ বছরের কিস্তিতে, যা চলবে ২০৩৫-৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত।

জে-১০ সিই : চীনা বিমানবাহিনীর রপ্তানি সংস্করণ

জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান মূলত চীনের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত জে-১০সি-এর রপ্তানি সংস্করণ। এটি একটি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট, যা আকাশে থেকে আকাশ ও আকাশ থেকে স্থল—দুই ধরনের যুদ্ধেই সমান পারদর্শী।

গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাত চলাকালে পাকিস্তান দাবি করেছিল, তাদের জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান ভারতের রাফায়েল জেট ভূপাতিত করেছে। যদিও সেই দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি, এরপর থেকেই জে-১০ সিই বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।

চুক্তির কাঠামো ও ব্যয়ের হিসাব

প্রতিটি ফাইটার জেটের আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি মার্কিন ডলার (৭৩০ কোটি টাকা)। ২০টি জেটের মোট মূল্য হবে প্রায় ১২০ কোটি ডলার (১৪,৬০০ কোটি টাকা)। এর সঙ্গে প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি, ফ্রেইট কস্ট ও আনুষঙ্গিক ব্যয় যুক্ত হয়ে দাঁড়াবে আরও ৮২ কোটি ডলার। বিমা, ভ্যাট, কমিশন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও অন্যান্য খরচসহ মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২০ কোটি ডলার।

এই ক্রয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে জিটুজি (গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট) পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে। এজন্য ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিমানবাহিনীর প্রধান।

চুক্তি যাচাই ও চূড়ান্তকরণের দায়িত্ব কমিটির

এই কমিটি খসড়া চুক্তিপত্র যাচাইবাছাই, ক্রয়পদ্ধতির উপযোগিতা নির্ধারণ, মূল্য নির্ধারণ ও পরিশোধের শর্ত চূড়ান্ত করবে। একইসঙ্গে সংরক্ষণ ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা নিয়েও আলোচনা করবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গত মার্চের চীন সফরে এই যুদ্ধবিমান ক্রয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। চীনা কর্তৃপক্ষ তাতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। এরপর এপ্রিল মাসে কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করা হয়।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বর্তমান শক্তি

ওয়ারপাওয়ারবাংলাদেশ ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট এয়ারক্রাফট সংখ্যা ২১২টি, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট। এদের বেশিরভাগই চীনা তৈরি এফ-৭ মডেল।

এছাড়া বাহিনীতে রয়েছে মিগ-২৯বি জেট, ইয়াক-১৩০ লাইট অ্যাটাক ট্রেইনার, এবং পরিবহন কাজে ব্যবহৃত সি-১৩০জে বিমান।

হেলিকপ্টার ইউনিটে রয়েছে রাশিয়ান এমআই-১৭ ও এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, যা সেনা পরিবহন ও গানশিপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জে-১০ সিরিজ কেন গুরুত্বপূর্ণ

চীনের বাইই অ্যারোবেটিক টিম ২০০৯ সালে জে-১০এ মডেল অন্তর্ভুক্ত করে, যা ২০২৩ সালে আপগ্রেড হয়ে জে-১০সি তে রূপ নেয়। উন্নত রাডার, দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং আধুনিক এভিওনিক্সের কারণে এটি বর্তমানে চীনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত।

বিশ্লেষকদের মতে, জে-১০ সিই সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নতুন প্রযুক্তি, উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

সূত্র : দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর