মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন

শহীদ আবরারের নামে ফেনী নদীর নামকরণের দাবি

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৪ বার পঠিত হয়েছে
ফেনী নদীর তীরে শহীদ আবরারেন ছবিসংবলিত গেঞ্জি গায়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর আজ। ভারতের সঙ্গে ফেনী নদীর পানি হিস্যার চুক্তিসহ বন্দর ও জ্বালানি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতভর নির্মম নির্যাতনে মৃত্যু হয় আবরারের।

এদিকে শহীদ আবরারের বাড়ি ফেনী না হলেও ফেনী নদীর পানি হিস্যাসহ দেশের স্বার্থ রক্ষায় তার সাহসী ভূমিকা ফেনীবাসীর হৃদয় চিরঅম্লান থাকবে বলে মনে করছেন এ জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। এ ছাড়া আবরারের নামে ফেনী নদীর নামকরণের দাবিও তুলেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল কালবেলাকে জানান, ‘আমি তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী থেকে নদী অববাহিকায় দাঁড়িয়ে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের ফেনী নদীর ন্যায্য হিস্যার দাবি তুলে ভারতীয় আক্রোশের শিকার হয়েছেন। আর তাদের তাঁবেদার আওয়ামী লীগ নির্মমভাবে তাকে খুন করেছে। ফেনীর জনগণ আবরার ফাহাদকে কোনো দিন ভুলবে না, ভুলতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরবার আমাদের হৃদয়ে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে। যতদিন আমাদের বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা আবরার ফাহাদকে স্মরণ করব। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে আমাদের যে চেতনা সে চেতনায় সে একজন আদর্শ। ফেনী নদীসহ অভিন্ন নদী নিয়ে আমাদের সঙ্গে ভারতের যে সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করা উচিত। এ ছাড়া আমি দাবি করব, আবরারের স্মৃতি রক্ষায় ফেনী নদীর নাম ‘আবরার নদী’ রাখা হোক।

 

 

ফেনী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহীম কালবেলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সর্বত্রই ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছে তাদের সবাইকে এরকম হুমকি, ধমকি, মামলা ও হত্যার মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করেছে। আবরার ফাহাদ আমাদের ফেনী নদী নিয়ে কথা বলেছিলেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আবরার ফাহাদ জীবন দিয়েছেন। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে বা প্রতিনিধিত্ব করেছে ছাত্রলীগসহ ছাত্রলীগের মুরুব্বি সংগঠন আওয়ামী লীগ; এরা সবসময় আধিপত্যবাদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। আর যারা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদের রুখে দাঁড়ানোর জন্য সব ষড়যন্ত্র করেছে। সেই অংশ হিসেবে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে খুন করেছে।’

ফেনী জেলা হেফাজতে ইসলামের সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক কালবেলাকে বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই মূলত ফ্যাসিবাদীরা আবরার ফাহাদের মতো মেধাবী ছাত্রকে খুন করেছে। তারা আবরার ফাহাদকে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে। ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনে অসংখ্য ওলামায়ে কেরামকে বিশেষ করে সারা দেশে হেফাজতে ইসলামের আলেমদের যে পরিমাণ নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছিল, সেটিও মূলত ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আলেমদের বলিষ্ঠ অবস্থানের কারণে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব। আমাদের কণ্ঠকে তারা রোধ করতে পারবে না। আমাদের দেশকে তারা ‘র’ এর মাধ্যমে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষা খাতকে। এভাবে হতে পারে না। আমরা দেখেছি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিপক্ষে যখনই যারা ভূমিকা রেখেছে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমরা সবাইকে আহ্বান করব, আসুন আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিপক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করব।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা সংগঠক আবদুল্লাহ আল যোবায়ের কালবেলাকে বলেন, ‘আজকের এদিনে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আবরার ফাহাদকে হত্যা এটা শুধু একটা দলের সিদ্ধান্ত ছিল না, এটা ভারতের সিদ্ধান্তও ছিল। শুধু আবরার ফাহাদকে নয়, অতীতে সারা দেশে ভারতকেন্দ্রিক কথা বললে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি অনেককে গুম করে আয়নাঘরে নেওয়া হয়েছে। আবরার ফাহাদ হত্যার পর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে সে আন্দোলন থেকে ভারতের বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন সে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ রুখে দাঁড়িয়েছে। আবরার ফাহাদ হত্যার দিন থেকে আমাদের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আগামীতে আমরা বাংলাদেশে কোনো আগ্রাসন হতে দেব না। বাংলাদেশ থাকবে বাংলাদেশকেন্দ্রিক। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, ভারতীয় আগ্রাসন আবার তৈরি হওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একটি দলকেন্দ্রিক হওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যদি আবারও ভারতীয় আগ্রাসন হওয়ার চেষ্টা হয় তাহলে আবু সাঈদ ও আবরারের মতো বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ করা হবে।’

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেনী জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা ও ডকুমেন্টারি ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রদর্শিত হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। সেদিনই কুষ্টিয়ার বাড়ি থেকে বুয়েটে এসে শেরেবাংলা হলে নিজের ১০১১ কক্ষে এসেছিলেন আবরার। ফেসবুকে ভারতবিরোধী একটি পোস্টের জের ধরে রাত ৮টার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। আবরারকে ‘শিবির আখ্যা’ দিয়ে দুই দফায় দুটি কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে জানা যায়, আবরারকে হত্যা করে একতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি ফেলে রাখা হয়েছে। পরে বুয়েট মেডিকেলের ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয় যে, আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

 

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর