ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের একসময়ের প্রবল প্রভাবশালী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাম্প্রতিক বিপর্যয় অনেককেই হতবাক করেছে। প্রিমিয়ার লিগে একের পর এক পরাজয়, লজ্জাজনক হার চতুর্থ বিভাগের দলের কাছে, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী সিটির বিপক্ষে অপমানজনক পরাজয়—যেকোনো শীর্ষ ইউরোপীয় ক্লাবে হলে কোচের চাকরি অনেক আগেই চলে যেত। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ম্যানইউর পর্তুগিজ কোচ রুবেন আমোরিম এখনও আছেন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। প্রশ্ন উঠছে—কী এমন আছে ম্যানইউর আংশিক মালিক স্যার জিম র্যাটক্লিফ তাকে সরাতে চাইছেন না?
ব্যক্তিগত পছন্দ ও সম্পর্ক
আসলে আমোরিমকে ঘিরে র্যাটক্লিফের ব্যক্তিগত দুর্বলতা অনেকটাই স্পষ্ট। এরিক টেন হাগের সময়ে যেমন অনাগ্রহ ছিল, আমোরিমের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো। গোপনে লিসবনে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, প্রথম দেখাতেই মনে ধরেছিল। বুদ্ধিদীপ্ত, চিন্তাশীল আর খোলামেলা স্বভাবের জন্য তাকে “ফ্যান্টাস্টিক কোচ” বলে আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি ট্রেনিং গ্রাউন্ডে বসে কফি খেতে খেতেই নাকি দু’জনের মাঝে রসিকতা হয়—যেখানে মালিককে তিরস্কার করার সাহসও রাখেন পর্তুগিজ কোচ। এই ব্যক্তিগত সখ্যই এখন বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার বিদায়ের পথে।
এছাড়াও ম্যানইউ যদি আমোরিমকে সরায়, তবে খরচও কম নয়। স্পোর্টিং লিসবন থেকে তাকে আনতে খরচ হয়েছিল ১১ মিলিয়ন পাউন্ড, চুক্তি চলছে ২০২৭ পর্যন্ত। বরখাস্ত করতে হলে আরও অন্তত ১০ মিলিয়ন দিতে হবে। এর সঙ্গে টেন হাগ ও স্পোর্টিং ডিরেক্টর ড্যান অ্যাশওয়ার্থকে সরাতে যে মোটা অঙ্ক গুনতে হয়েছে, তাতে এক বছরের মধ্যে শুধু কোচ-ম্যানেজার পরিবর্তনেই ক্লাবের ক্ষতি দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড। নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণসহ আর্থিক পুনর্গঠনের সময় এ বোঝা বহন করতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ।
দলে বিনিয়োগ ও গড়পড়তা ফল
আমোরিমের চাহিদায় গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফারে এসেছে ২২০ মিলিয়ন পাউন্ডের খেলোয়াড়—মাখ্যুস কুনিয়া, ব্রায়ান এমবিউমো, বেঞ্জামিন সেসকো। আবার মার্কাস রাশফোর্ড, গার্নাচো, অ্যান্টনিদের বিদায়ও হয়েছে। অর্থাৎ দলে তার ছাপ স্পষ্ট। এখনই তাকে সরালে নতুন করে স্কোয়াড গঠনের ঝুঁকি নিতে হবে।
সমর্থক ও ক্লাবের মানসিকতা
আমোরিমের প্রতি দর্শকদের সহনশীলতা আরেকটা কারণ। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিদায়ের পর থেকে প্রতিটি ম্যানেজারকে সমর্থন দিয়ে এসেছে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। ডেভিড ময়েস থেকে শুরু করে ভ্যান গাল, মরিনহো, সোলশায়ের কিংবা টেন হাগ—কেউই বাঁচাতে পারেননি ম্যানইউকে। সেই ধৈর্যের সংস্কৃতিই এবার অ্যামোরিমকে রক্ষা করছে।
তবুও প্রশ্ন রয়ে যায়
তবে খেলার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্লাবের কিংবদন্তিরাও। ওয়েইন রুনি সোজাসাপ্টা বলেছেন, ‘দলটার আত্মা নেই, পরিবর্তন দরকার।’ আরেকদিকে, সাবেক খেলোয়াড়দের মন্তব্য, যদি আমোরিম এতটা সুদর্শন ও ক্যারিশম্যাটিক না হতেন, তবে অনেক আগেই চাকরি হারাতেন।
সব মিলিয়ে, র্যাটক্লিফের ব্যক্তিগত পছন্দ, বিপুল আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা, নতুন খেলোয়াড়দের মানিয়ে নেওয়ার সময় এবং সমর্থকদের ধৈর্য—এই চার কারণই আপাতত আমোরিমকে ধরে রেখেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আর কতদিন? ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের আকাশে মেঘ জমছেই, এবার ঝড় নামতে আর দেরি কতটুকু?