শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

তুচ্ছ ঘট/নায় এভাবেও তিন/জনকে পি/টিয়ে মেরে ফেলা যায়?

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫
  • ১১ বার পঠিত হয়েছে
কুমিল্লার মুরাদনরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড়। ছবি : Max tv bd

কুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা শুধু মর্মান্তিক নয়, এটি আমাদের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। এলাকাবাসীর কয়েকজনের ভাষ্যমতে, মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এটি সংঘটিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টায় দিকে উপজেলার বাঙ্গরা থানার আকবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি প্রতিপক্ষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, পরিবারটি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। এলাকায় ছিল তাদের অনেক প্রভাব। সেই ক্ষোভ ও সম্প্রতি মোবাইল চুরির ঘটনা দুইয়ে মিলে এ হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন ওঠে—একটি মোবাইল ফোনের মূল্য কি মানুষের জীবনের থেকে বেশি?

জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, খেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বসহ নানা তুচ্ছ ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে একের পর এক প্রাণ। যেটা নিয়ে দ্বন্দ্ব সেগুলো ফেরত এলেও ঝরে যাওয়া জীবন আর কখনোই ফেরত আসে না। ভুক্তভোগী পরিবার বয়ে বেড়ায় দুঃসহ স্মৃতি।

ঘটনার পর অভিযুক্তরা আটক হন, মামলা ও বিচারের সম্মুখীনও হন; কিন্তু তাতেই থেমে থাকে না এসব অপরাধ। দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে এসব ঘটনা। আমরা কখনোই ভাবি না মুরাদনগরে হত্যাকাণ্ডের শিকার রাসেলের দুই বছর বয়সী বাচ্চার মতো এমন অসংখ্য বাচ্চাকে তুচ্ছ ঘটনায় এতিম করে দিচ্ছি।

এসব ঘটনা আমাদের আইনশৃঙ্খলার দিকেই তীর ছোড়ে না, আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্রও তুলে ধরে। যখন একটি সম্প্রদায় নিজের হাতে বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তা শুধু আইনের শাসনের প্রতি অবমাননাই নয়, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনও।

এ ধরনের ঘটনায় কেবল আইনি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে যে, পিটিয়ে মেরে ফেলা কোনো সমাধান নয়। এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া দরকার যে, প্রত্যেক মানুষের জীবনের মূল্য অপরিসীম এবং সামান্য ঘটনায় হত্যার মাধ্যমে এর বিচার সম্ভব নয়।

মুরাদনগরের এ ঘটনা আমাদের সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা হিংস্রতা এবং অসহিষ্ণুতার প্রতিফলন। আমাদের প্রয়োজন এমন একটি সমাজ, যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি বিরাজ করবে এবং কোনো তুচ্ছ ঘটনা কারও জীবন কেড়ে নেবে না।

যদিও মুরাদনগরের এ ঘটনার তদন্ত এখনো চলমান। এ ঘটনায় এখনো কোনো দোষীকে আটক বা গ্রেপ্তার করা যায়নি। যদি প্রমাণ হয়েই থাকে ওই পরিবার দোষী, তাহলে তাদের আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া যেত। যদি আইন নিজেরাই নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া হয় তবে এই নৈতিক অবক্ষয় আরও বাড়তে থাকবে। সমাজের স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা থমকে যাবে।

তুচ্ছ ঘটনায় হত্যার মতো ঘটনা শুধু একটি সমস্যা নয়, এটি আমাদের সমাজের গভীরতর সংকটের প্রতিফলন। এর সমাধানে শিক্ষা, আইন, এবং সামাজিক সংস্কারের পাশাপাশি প্রত্যেক ব্যক্তির সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর