রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৪ অপরাহ্ন

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন কে এই ফয়সাল?

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৫ বার পঠিত হয়েছে
সংগৃহীত ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে বর্তমানে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। সেই সঙ্গে ১১ পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) মেডিক্যাল বোর্ডের এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।

বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। তার পরিচয় নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, করিম নামে এই ব্যক্তি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। তার পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় তার সঙ্গে ফয়সালের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ছবি রয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সালের সঙ্গে আততায়ীর চেহারার সাদৃশ্য থাকায় গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

শনিবার দুপুরে একই ব্যক্তির ছবি গণমাধ্যমে পাঠিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলেছে, হাদির ওপর গুলির ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। এ ছাড়া ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

ফয়সাল করিম আসলে কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সালের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও অ্যানালিস্ট ওয়ার্ক নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইনের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য (রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী নেতৃত্বাধীন কমিটি) ফয়সাল করিম দাউদ খান একই ব্যক্তি।

হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে।

পুলিশ কী বলছে? 

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় জড়িত প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুলকে গ্রেপ্তারে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বারবার অবস্থান ও সিম কার্ড পরিবর্তনের কারণে তার অবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

ডিএমপির মতিঝিল জোনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে অভিযুক্ত এখনো দেশ ছাড়তে পারেননি। বিভিন্ন সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালানো হলেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ সূত্র জানায়, অভিযুক্তের বাসাসহ অন্তত ৫টি অবস্থান শনাক্ত করা হলেও কোনো জায়গাতেই তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি একাধিক মোবাইল ফোন ও সিম ব্যবহার করছিলেন এবং ঘন ঘন নম্বর পরিবর্তন করছিলেন, যা তদন্তে জটিলতা সৃষ্টি করছে।

ডিএমপি জানায়, এসব তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। তবে সর্বশেষ পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। আজও নতুন কোনো কার্যকর তথ্য পাওয়া যায়নি।

তদন্তে ডিএমপির পাশাপাশি র‍্যাব, ডিবিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

মামলার বিষয়ে মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার বাদী হয়ে মামলা করবে। তবে আহত অবস্থায় পরিবার বর্তমানে হাসপাতালে থাকায় আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, গুলিবিদ্ধ হাদির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলায় মোটরসাইকেল চালক ও পেছনে বসে গুলি চালানো ব্যক্তিকে আসামি করা হবে।

এর আগে শনিবার সকালে ডিএমপি কমিশনার গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযুক্ত প্রধান ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে কতজন জড়িত তা এখনো তদন্তাধীন এবং বিষয়টি বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য প্রার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর