বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন

বেগম রোকেয়াকে ‘কাফের-মুরতাদ’ বললেন রাবি শিক্ষক, সমালোচনার ঝড়

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১২ বার পঠিত হয়েছে
বেগম রোকেয়ার প্রতিকৃতি, ইনসেট রাবি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান নারী শিক্ষার পথিকৃৎ বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ-কাফের’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) সকালে রাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদুল হাসান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাজিদ হাসান নামের একজনের একটি পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘আজ মুরতাদ কাফির বেগম রোকেয়ার জন্মদিন।’

মুহূর্তেই পোস্টটি ভাইরাল হয় এবং নেটজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

রাকসুর গত নির্বাচনে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রার্থী মামুনুজ্জামান স্নিগ্ধ ওই পোস্টের স্কিনশট শেয়ার করে লিখেছেন, “নারী শিক্ষার অগ্রদূত রোকেয়াকে কাফের-মুরতাদ বলা হয়েছে। ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, নারী নিপীড়ন বা বৈষম্যের অনেক কিছুরই নামে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। রোকেয়া এসব কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লিখতেন— তাই আজও তিনি অনেকের কাছে ‘ভয়ঙ্কর’ মনে হয়।”

আরেক জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাদিকুর রহমান খান লিখেছেন, ‘এক শতাব্দী আগে মারা যাওয়া একজন নারীবাদী লেখিকাকে আজও গালাগাল করতে হয়! তার মানে রোকেয়ার কাজ এদের মনে এখনো আঘাত দিয়ে যায়— এটাই প্রমাণ করে তিনি কতটা সফল ছিলেন।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরমা পারমিতা বলেন, ‘বেগম রোকেয়া উপমহাদেশের নারীশিক্ষা, মানবিক মূল্যবোধ ও প্রগতিশীল চিন্তার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না; তিনি কুসংস্কার, বৈষম্য ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়েছেন— যেটি সব ধর্মই সমর্থন করে। একজন শিক্ষক হয়ে তাকে ধর্মীয় গালি দেওয়া শুধু অসম্মানজনক নয়, অন্যায়ও বটে।’

রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এসএম আতিক মন্তব্য করেন, ‘৫ আগস্ট আমাদের বাকস্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এর সুবাদে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকও এখন ফতোয়া দিতে পারেন।’

রাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা বলেন, ‘সবারই নিজস্ব দর্শন থাকে, আর তার মাপকাঠিও আলাদা। তবে এ ধরনের মন্তব্য প্রকাশ্যে না বলাই উত্তম বলে মনে করি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, ‘বেগম রোকেয়া পুরো উপমহাদেশেই নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃত। তার কারণেই আমাদের নারীরা বর্তমানে পড়াশোনা, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে। তাকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করা মানে গোটা নারী সমাজকেই হেয় করা। তার এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালবেলার পক্ষ থেকে সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, তিনি সাজিদ হাসানের পোস্ট পড়ে মনে করেছেন রোকেয়া ‘ইসলামবিদ্বেষী’ ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘এই লেখাগুলো ভেরিফিকেশনের জন্য বড় আলেমের কাছে যেতে হবে। আলেমরাই বলতে পারবেন তিনি কাফের ছিলেন কিনা।’

তবে রোকেয়ার অন্যান্য লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শুধু দাবি করেন, তার একটি উপন্যাস তিনি পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সাজিদ হাসানের পোস্টে বেগম রোকেয়ার রচনাবলী থেকে ইসলাম-সম্পর্কিত অংশগুলো খণ্ডিতভাবে তুলে ধরে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেই রাবির এই শিক্ষক তার মন্তব্য করেছেন।

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব জানান, এটা তার (ওই শিক্ষকের) ব্যক্তিগত মত। অনেকের কাছে এটি ভালো নাও লাগতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি (উপাচার্য) এ ধরনের মন্তব্য সমর্থন করেন না বলে জানান।

এদিকে শিক্ষাঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে তার এ ধরনের গালাগাল ও ধর্মীয় আক্রমণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধ, যৌক্তিকতা ও সব শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির মানসিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর