শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪১ অপরাহ্ন

রেড জোন রংপুর অঞ্চল, ১৬ বছরে ১৮৫ ভূমিকম্প

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত হয়েছে
মাক্স টিভি গ্রাফিক্স
২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল দুপুরে উৎসে ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। স্থায়িত্ব ছিল ২৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড। সেদিন রংপুরের অধিকাংশ মানুষ ভয়ে বাসা-বাড়ি, অফিস ও দোকানপাট ছেড়ে রাস্তা ও খোলা মাঠে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

একই বছরের ৫ জানুয়ারি ভোরে দুই দফায় ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রংপুর নগরী এবং ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে প্রায় সোয়া মিনিট কম্পন হয়, যার রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বাংলাদেশের নরসিংদির ঘোরাশাল এলাকায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। যা ভয়াবহ রংপুরেও আতঙ্কের কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের  প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান মাক্স টিভি বিডিকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে ভূ-কম্পনের তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট এক নন্বরে।

দ্বিতীয় স্থানে রংপুর। বিশেষ করে যুমার উপারে মধুপুর ফল্ট ও শিলং ফল্ট এর মাঝামাঝি রংপুর হওয়ায় ঝুঁকি বেশি।’তিনি বলেন, ‘১৮ শতকের শেষের দিকে সাড়ে আট মাত্রার ভুমিকম্প হয় রংপুর অঞ্চলের চিলমারীতে। যার ফলে যমুনা নদীর উৎপত্তি।

গত ২১ বছরে রংপুর অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল না। এরপর যদি কখনো এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তাহলে সাত মাত্রার বেশি হবে। এই অঞ্চলে ভূমিকম্পন হওয়ার বড় কারণ হলো এই অঞ্চলে ভূ-গর্বস্ত পানির স্তর আশঙ্কাজনকহারে নিচে নেমে গেছে।’সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ বছর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় রংপুরে ভূমিকম্পের রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এরপর থেকে কার্যত কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়েনি এই অঞ্চলের মানুষের।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ২০০৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এ অঞ্চলে ১৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। ২০০৭ সালে ২৫ বার এবং ২০০৮ সালে ৪০ বার ভূমিকম্প হয়েছে।  ২০০৯ সালের আগস্টে পাঁচবার ও সেপ্টেম্বরে তিনবার ভূমিকম্প হয়। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ভূমিকম্প হয় দুইবার। ২০২০ সালে এখানে ৭৪ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ মাত্রার কম্পন ৩৫ বার, ৪ থেকে ৫ মাত্রার কম্পন ৩৩ বার আর ৫ থেকে ৬ মাত্রার কম্পন হয়েছে ৬ বার।

২০২১ সালের ৬ এপ্রিল রংপুরসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলায় মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। রাত ৯টা ২০ মিনিটে তিন সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১, উৎপত্তিস্থল ভুটানের ছ্যামছি এলাকা। ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বদরগঞ্জ ২ দশমিক ৯ এবং কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে ২. ৪ মাত্রার ভূমিকম্পন হয়।

এদিকে, এই রংপুরসহ এই অঞ্চলকে ভূমিকম্পের রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এত বছরেও এ অঞ্চলকে ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষিত করতে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। বরং রংপুর নগরীতে বিল্ডিং কোড না মেনে অবাধে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। সরকারি নানা পরিত্যক্ত ভবনে এখনও চলছে কার্যক্রম।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে রংপুর নগর ভবন পরিত্যক্ত ভবনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। তাতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ট্রেজারি ভবন, সার্কিট হাউজ (পুরাতন)-সহ ৪৭টি সরকারি স্থাপনার নাম রয়েছে। এসব ভবনের কয়েকটি ছাড়া সব ভবনই সাময়িক সংস্কার করে কাজ চালানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রংপুর শহরে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা ও তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়, তা নির্ধারণে ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে তিন দিনের বৈঠক হয়। রংপুর সেনানিবাসে সেই বৈঠকে ছিলেন সিটি মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা প্রত্যেকেই সুপারিশ আকারে একটি প্রস্তাব পাঠান সরকারের উচ্চ দপ্তরে। সেই প্রস্তাবের অগ্রগতি নিয়ে কেউ কিছুই জানে না।

রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বাদশা মাসুদ আলম মাক্স টিভি বিডিকে বলেন, ‘ভৌগলিক কারণে হিমালয় খুব কাছে সে কারণে এই অঞ্চল ঝুঁকিতে। ৬ মাত্রার বেশী কম্পন হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব উপকরণ দরকার সেগুলো কিছুটা সংকট আছে। আমরা ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।’

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর