বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২০ অপরাহ্ন

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলবে ‘হাসিনা ইস্যু’

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১১ বার পঠিত হয়েছে
ছবি : সংগৃহীত

করার পর বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে কতটা প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে দুই দেশেই বাড়ছে আলোচনা।

আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে ‘শেখ হাসিনা ইস্যু’ দুই দেশের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কি না— তা নিয়েই এখন বিশেষ নজর রাজনীতি ও কূটনৈতিক মহলে।

গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দ্রুত তলানিতে নেমে যায়। এমন পটভূমিতে নতুন রায়ের পর দুই দেশের সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে তা নিয়ে কৌতূহল আছে অনেকের।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মৃত্যুদণ্ড পান। আরেক অভিযুক্ত, সাবেক আইজিপি ও রাজসাক্ষী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন পান পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন।

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান এখন ভারতে, আর মামুন কারাগারে।

শেখ হাসিনার মামলায় ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার পরপরই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে আবারো অনুরোধ করা হবে।

এর পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।’

এর আগেও অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করলেও ভারত সরকার এ বিষয়ে কখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে ভারত সরকারের এ বিষয়ে এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক অবস্থান হলো, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে এ দেশে ‘সাময়িক’ (ফর দ্য টাইম বিয়িং) আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলছেন, প্রত্যর্পণ একটি জটিল বিষয় এবং এ ক্ষেত্রে কাউকে প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে মৃত্যু হুমকির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তো শেখ হাসিনার মামলায় মৃত্যুদণ্ডই দেওয়া হয়েছে। ফলে সেই হুমকিটি তো আছেই। আপাতত এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে না। তবে প্রশ্ন হলো, এই ইস্যুতেই দুই দেশের সবকিছু আটকে থাকবে কি না।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে তাতে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরই হস্তান্তরের অনুরোধ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু তারপরেও ওই চুক্তিতে এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো বিবেচনায় নিয়ে এমন অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগও রয়েছে।

শ্রীরাধা দত্ত বলছেন, বাংলাদেশের আদালতে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর এটা এখন পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে তার মৃত্যু হুমকি রয়েছে এবং এটিই ভারত সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে হস্তান্তর না করার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি।

ভারত গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশিদের ভিসা সীমিত করেছে; পর্যটন ভিসা বন্ধ। মেডিকেল ভিসাও পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও নেতারা ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন— যা দিল্লি আরও নেতিবাচকভাবে দেখছে। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাও সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে ভারতের নিরাপত্তামহলে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে— মত কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, এখানে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ— নতুন সরকার কেমন হবে, ভারত সেই সরকারের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চাইবে এবং শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ কতটা সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকা নেয়।

তার মতে, শেখ হাসিনা ইস্যুকে পাশে রেখে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা যেতে পারে। আবার এটিকে কেন্দ্র করে চাপ তৈরির কৌশলও নিতে পারে ভবিষ্যৎ সরকার।

অন্যদিকে শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, নতুন সরকারও সম্ভবত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ করবে, তবে এই ইস্যু ধরে রাখলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতি পাবে না।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর