বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক জীবনের অন্যতম শক্তিশালী বন্ধন। কিন্তু অনেক বাবা-মা ভাবেন, কেন তাদের সন্তানরা বড় হলে ঘরে কম আসে বা তাদের দেখা করতে আসার সময় কমে যায়। প্রায়ই এটা ভালোবাসার অভাবে নয়; বরং জীবন পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। আর কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও একটু জটিল।
কেন সন্তান বড় হলে ঘরে কম আসে তা বুঝতে পারা দুপক্ষকেই আরও সহজে এবং ভালোভাবে সম্পর্ক পুনঃসংযোগ করতে সাহায্য করে। তাই চলুন জেনে নিই কারণগুলো কী কী।
জীবন পরিবর্তনের কারণে দেখা কমে যায়
সত্যি কথা বলতে, বড় হতে হতে জীবন বেশ জটিল হয়ে ওঠে। যে ছোট্ট ছেলে বা মেয়েটা এক সময় আপনার সঙ্গে ডিনার টেবিলে বসত, এখন তার নিজের দেওয়ার মতো বিল, করার মতো কাজ বা বড় করার মতো সন্তান থাকতে পারে। বিষয়টি বুঝতে হবে যে, তারা আপনাকে এড়াচ্ছে না, তারা শুধু অনেক কিছু সামলাচ্ছে।
নতুন দায়িত্ব এবং ভূমিকা
যখন ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে নিজের জীবন গড়ে তোলে, তখন তাদের অনেক ভূমিকায় নিজেকে তৈরি করতে হয়—হয়তো তারা কারো পার্টনার, বাবা-মা বা চাকরিজীবী। তাদের জীবনে সময় কমে যায়। বাবা-মাকে দেখতে চাওয়ার ইচ্ছা হলেও সবসময় তা সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে এটি ব্যক্তিগত ইচ্ছার বিষয় মনে হলেও, হয়তো তা নয়।।
ভৌগোলিক দূরত্ব এবং লজিস্টিক
স্থানের দূরত্বও একটি বড় কারণ। হয়তো আপনার ছেলেটি বা মেয়েটি দূরে অন্য শহরে চলে গেছে বা চাকরির জন্য বিদেশে পাঠিয়েছেন তাকে। ভ্রমণের জন্য সময় এবং খরচ লাগে, আর সত্যি কথা বলতে মানুষ ক্লান্তও হয়। তারা ফোন করতে পারে বা ছবি পাঠাতে পারে, যা কম হলেও সম্পর্ক ধরে রাখে। বাস্তবতা খারাপ লাগলেও এটা মানতে হবে।
নতুন পারিবারিক অগ্রাধিকার
যখন বড় ছেলে-মেয়ের নিজস্ব পরিবার হয়, তখন মনোযোগ অন্য দিকে যায়। ছুটির দিন শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কাটতে পারে বা সপ্তাহান্তে বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এর মানে তারা আপনাকে ভুলে যায়নি। তারা শুধু নতুনভাবে পরিবার তৈরি করছে, যা আপনিও এসময় করেছেন।
পরিষ্কার প্রত্যাশা
এখানেই জটিলতা। বাবা-মা ভাবতে পারেন সন্তানরা যে কোনো সময় স্বাগত। কিন্তু তারা হয়তো ভাবতে পারে আগে অনুমতি নিতে হবে। তাই সবাই অপেক্ষা করে থাকে। কী প্রত্যাশা আছে তা খোলাখুলি কথা বললে অনেক সহজ হয় সবার জন্যই।
বাবা-মায়ের জন্য মানসিক প্রভাব
অনেক বাবা-মা নীরবে কষ্ট পান যখন সন্তান তাদের কাছে কম যায়। এটি শুধু সঙ্গের অভাব নয়; বরং সেই অংশের অভাব যা এক সময় পরিবারে কেন্দ্রীয় ছিল। বড় হয়ে সন্তানদের স্বাধীন হতে দেখা সুন্দর হলেও মাঝে মাঝে উদ্দেশ্য হারানোর অনুভূতি দেয় মা-বাবাকে।
কম দেখা মানে প্রত্যাখ্যান নয়। ফোন কল, স্মৃতি ভাগাভাগি, বা ছোট বার্তা এখনো সেই স্থান পূরণ করতে পারে। নতুন রুটিন, সামাজিক গোষ্ঠীতে যোগদান বা দীর্ঘদিন ধরেই পিছুপড়া শখগুলো মন ভরে তুলতে সাহায্য করে।
সন্তান কম দেখা মানে ভালোবাসা কম নয়। বাবা-মা যারা সন্তানের নতুন জীবন মেনে নেন, তারা কম একা অনুভব করেন। বড় ছেলে-মেয়ে যারা যোগাযোগ রাখে, তারা বাবা-মাকে মূল্যবান অনুভব করায়। থেরাপিও সাহায্য করতে পারে। শেষ পর্যন্ত, ভালোবাসা শুধু দেখা বা ফোন কল নয়। যত্ন, প্রচেষ্টা এবং বোঝাপড়া গুরুত্বপূর্ণ।