বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নতুন উত্তাপ

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৯ বার পঠিত হয়েছে
শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গত এক বছরে বাংলাদেশের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ভারত তাকে প্রত্যর্পণ না করায় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে কূটনৈতিক অস্বস্তি আরও বেড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক তিন বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান, শ্রীরাধা দত্ত ও সঞ্জয় ভর্ধ্বাজ ভারতের সামনে থাকা বাস্তবতা, দ্বন্দ্ব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার নানা দিক তুলে ধরেছেন।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হাসিনাকে ফেরত দিতে না চাইলে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে মধ্যে কী ধরনের টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে, তা ফুটে উঠেছে।

ভারতের জন্য ‘গলার কাঁটা’ হাসিনা

ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, নির্বাসিত অবস্থায় হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ফলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে দীর্ঘ মেয়াদে চাপ বজায় থাকবে। তার ভাষায়, হাসিনার উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটার মতো আটকে থাকবে।

তবে তিনি এও মনে করেন যে ভারত নিজের মিত্রদের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার যে প্রতিশ্রুতি দেয়, হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া তারই প্রতিফলন। রাজনৈতিকভাবে, ভারতের জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে নতুন কিছু সুযোগও তৈরি করতে পারে বলে কুগেলম্যানের ধারণা।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বংশভিত্তিক দলগুলো দীর্ঘ সময় সংকটে থাকলেও সেগুলো পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায় না। সেই কারণে আওয়ামী লীগকেও পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। ভবিষ্যতের কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনে এই দল ফিরে আসার সুযোগ পেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

‘অস্বস্তিকর’ অবস্থায় ভারত

ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারত ‘এক অস্বস্তিকর অবস্থায়’ পড়েছে। তার মতে, ভারত বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশের জনগণের বড় অংশ হাসিনার প্রতি ক্ষুব্ধ, কিন্তু তাকে আবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে জায়গা করে দেওয়া সম্ভব না।

দত্ত আরও বলেন, আদর্শ অবস্থায় ভারত চাইবে একসময় আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসুক, কারণ ‘হাসিনা ভারতের জন্য সব সময়ই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিকল্প। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় ভারতকে বাংলাদেশে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’

এখন ঢাকার অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন করে সাজানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও যোগ করেন, দুই দেশের সম্পর্ক এখন অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তাই হাসিনা প্রত্যর্পণের প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে সম্পর্ককে আরও জটিল না করে দুই দেশকে এগিয়ে যেতে হবে।

হাসিনা প্রত্যর্পণ ‘অসম্ভব’

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় ভর্ধ্বাজ বলেন, হাসিনা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট— ঢাকার বর্তমান সরকারকে তারা ‘অ্যান্টি-ইন্ডিয়া’ হিসেবে দেখে।

ভর্ধ্বাজের মতে, বাংলাদেশে এখন যে রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায়, তারা প্রকাশ্যে ভারতের সমালোচনা করে এবং হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়াদিল্লিকেই দায়ী করছে।

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে ভারত হাসিনাকে ফেরত দিলে সেটি হবে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সেই শক্তিগুলোকেই ‘বৈধতা দেওয়া, যা বাস্তবসম্মত নয়। ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ‘রাজনৈতিক ব্যক্তি’র অপরাধের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে এবং ভারত এই ধারাটিই প্রয়োগ করছে বলে জানান তিনি।

২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও বাংলাদেশ আসামিদের প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য। তবে যদি ওই আসামী ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হন’ তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ রয়েছে।

সম্পর্কে নতুন সমীকরণ গড়ার সময়

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখন তিক্ততার মুখে পড়লেও সম্পর্ক ভাঙনের পর্যায়ে যায়নি। বাণিজ্য, সীমান্ত নিরাপত্তা, আঞ্চলিক যোগাযোগ—এসব খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

তবে হাসিনা ইস্যু দুই দেশের কূটনীতিতে বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ তাকে ফেরত চাইলেও ভারত তা সম্ভব বলে মনে করছে না। অন্যদিকে ভারতও বুঝছে যে ঢাকায় নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর