আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মিথ্যা কথা বলে জামায়াতে ইসলামী জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সমাবেশে ফখরুল আরও বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা একাত্তরকে ভুলিয়ে শুধু জুলাই আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চাইছে। একাত্তর আমাদের জন্মের ঠিকানা। একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।
আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস সামনে রেখে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো একটা দল বলছে, বিএনপি নাকি নির্বাচন পেছাতে চায়। আরে বিএনপি তো নির্বাচনমুখী দল। আমরা তো নির্বাচন পেছানোর কথা একবারও বলিনি। বারবার বলেছি যে, নির্বাচনটা অতিদ্রুত করতে হবে। আমি বলব, এসব মিথ্যা কথা বলে জনগণকে প্রতারণা করবেন না, মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।
তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বন্ধুমানুষ তাহের (জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের) নিজের এলাকায় আমাদের দোষারোপ করেছেন যে, আমরা নাকি নির্বাচনে বাধা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যতটা বাধা সৃষ্টি করেছেন, সেটা আপনারা করেছেন। আপনারা পিআরের দাবি নিয়ে এসেছেন, যেটা আলোচনায় ছিল না। জোট পাকিয়ে রাস্তার মধ্যে আন্দোলন করছেন এবং ধমক দিচ্ছেন—আজকেই হতে হবে, তা না হলে আমরা নির্বাচন হতে দেব না। মানুষকে বোকা ভাববেন না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২৪-এর যে আন্দোলন, সেটা ১৫ বছর ধরে করেছি, আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, হাসিনাকে উৎখাতের জন্য ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি। আমরা এতে বিভক্তি আনতে চাই না। কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু কিছু শক্তি, কিছু মানুষ এখানে বিভক্তি আনতে চায়। ১৯৭১ সালকে যারা ভুলিয়ে দিতে চায়, তাদের লক্ষ্য একটাই—তারা ১৯৭১-কে অস্বীকার করতে চায় এবং আমরা যে বাংলাদেশে একটা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি লড়াই করে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে, সেটাকে তারা অস্বীকার করতে চায়।
একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ আমাদের জন্মের ঠিকানা, এই দেশের, এই ভূখণ্ড একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে—এটা মনে রাখতে হবে সব সময়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সেসব শক্তির অনেক অনেক বেশি উলম্ফন দেখতে পাই আমরা। আমি বলব, একবার স্মরণ করুন অতীতের কথা, আমি কারও নাম ধরে বলব না। কিন্তু ১৯৭১ সালে আপনাদের কী ভূমিকা ছিল, সেটাও আপনারা মনে রাখবেন। আমি কথাটা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তাতে আপনারা নাখোশ হলে আমার কিছু করার নেই। সেদিন আপনারা সেই মুক্তিযুদ্ধকে গোলমাল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন এবং কিছু দুষ্কৃতকারী একটা অভ্যুত্থানের কথা বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিলেন। যারা আমাদের হত্যা করছিল তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আপনারা এই দেশের মানুষকে হত্যা করেছিলেন এবং আমাদের বহু গুণী-জ্ঞানী ব্যক্তিকে সেদিন হত্যা করে বদ্ধভূমিতে নিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন, আমরা একটুও ভুলিনি।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এই নেতা বলেন, আমরা যে বিষয়গুলোতে সই করেছি, সেখানে বলা হয়েছিল—সব রাজনৈতিক দল যেগুলোতে একমত, সেগুলো সব সই হয়ে গেল। এমনকি যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে না, তারা আপত্তি দেবে। সেটাকে বলা হয় নোট অব ডিসেন্ট, সেই নোট অব ডিসেন্ট লিপিবদ্ধ করা হবে এবং সেটা সনদে লেখা হবে, সঙ্গে সঙ্গে লেখা হবে। আর এখন উনারা যেটা প্রস্তাব উত্থাপন করলেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে, সেখানে ওই নোটের কোনো কথাই নেই, আমাদের এ কথাগুলো বেমালুম ভুলে গেছেন। তারা আবার নতুন করে কিছু বিষয় নিয়ে এসছেন। এটা অন্যায়, এটা জনগণের সঙ্গে একটা নিঃসন্দেহে প্রতারণামূলক কাজ।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতেই হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর হবে কি হবে না, সেটা আগামী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোটের কথা বলেছে, আমরা রাজি হয়েছি। গণভোটের প্রয়োজন ছিল না, তারপরও রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি যে, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। কারণ, আলাদাভাবে গণভোট করতে হলে খরচ বেড়ে যাবে, প্রায় হাজার কোটি টাকার ওপরে সেই খরচ হবে। নির্বাচনে দুটি ব্যালট থাকবে—একটি ব্যালট গণভোটের, আরেকটি ব্যালট নির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচনের। এখন তারা বলছেন, গণভোট আগে হবে, তারপরে নির্বাচনের কথা। এই নির্বাচন পেছানোর কথা আপনারাই বলছেন।
ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিন এবং তাকে আইনের মুখোমুখি করুন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না, বাংলাদেশের জনগণ সেটা মেনে নেবে না।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নজমুল হক নান্নু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী কমিটির মিজানুর রহমান, রিটা রহমানসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতারা