আমাদের সমাজে কিছু বিশ্বাস এমনভাবে গেঁথে গেছে, যেন সেগুলো ধর্মেরই অংশ। বিশেষ করে বিয়ের পর নারীদের চুড়ি, নাকফুল কিংবা সিঁদুর পরা নিয়ে বহু অলিখিত নিয়ম-কানুন চালু রয়েছে। কেউ যদি এসব অলঙ্কার না পরে, তখন অনেকেই নানা মন্তব্য করতে শুরু করে— ‘স্বামীর কিছু হয়ে যাবে না তো?’, ‘সংসারে অশান্তি নেমে আসবে’, কিংবা ‘স্বামীর হায়াত কমে যেতে পারে’ ইত্যাদি। অথচ এই বিশ্বাসগুলোর ধর্মীয় ভিত্তি অনেক সময়েই খুঁজে পাওয়া যায় না।
নাকফুল নিয়ে একটি প্রচলিত কুসংস্কার হলো— স্ত্রী নাকফুল না পরলে নাকি স্বামীর জীবনে বিপদ আসে, তার আয়ু কমে যায়। অথচ ইসলাম এ ধরনের কোনো দাবিকেই স্বীকৃতি দেয় না। বরং ইসলাম এসব মনগড়া বিশ্বাস ও কুসংস্কারকে পরিষ্কারভাবে বাতিল করেছে। ধর্মে কোথাও বলা হয়নি যে অলঙ্কার না পরলে রিজিকে টান পড়বে, বরকত চলে যাবে বা কারো জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এসব নিছক সামাজিক রীতি, যার কোরআন-হাদিসে কোনো ভিত্তি নেই।
ইসলাম বরাবরই সহজ, বাস্তবভিত্তিক জীবনযাপনের ওপর জোর দেয়। ইসলাম নারীদের অলঙ্কার পরার অনুমতি দিয়েছে, তবে সেটা ব্যক্তিগত রুচির বিষয়— বাধ্যতামূলক কোনো বিধান নয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে এ বিশ্বাস কতটা ভিত্তিহীন?
‘স্ত্রী নাকফুল না পরলে স্বামীর আয়ু কমে যাবে’— এই বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কুসংস্কারমূলক। ইসলামি শিক্ষার আলোকে এটি একেবারেই বাতিলযোগ্য। কারণ, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের হায়াত (জীবনকাল) নির্ধারিত করে রেখেছেন। কেউ চাইলেও তা এক মুহূর্ত এগিয়ে বা পিছিয়ে নিতে পারে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“কোনো প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারা যায় না। তা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে…”
(সুরা আলে ইমরান : ১৪৫)
ইসলামি পণ্ডিতদের মতামত
প্রখ্যাত ইসলামি বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন—
“আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তির হায়াত নির্ধারণ করে রেখেছেন। স্ত্রীর নাকফুল পরার সঙ্গে স্বামীর আয়ুর কোনো সম্পর্ক নেই। স্ত্রী নাকফুল পরুক বা না পরুক, তাতে স্বামীর আয়ু একটুও কমবে না বা বাড়বে না।”
নারীদের জন্য চুড়ি-নাকফুল পরা কি জরুরি?
ইসলামে নারীদের জন্য অলঙ্কার পরা অনুমোদিত— তবে তা জরুরি নয়। না পরলেও গোনাহ হবে না। আর অলঙ্কার না পরলে রিজিক কমে যাবে বা বরকত সরে যাবে— এমন ধারণার কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই।
আল্লাহ বলেন:
“পৃথিবীর সব জীবের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে ও কোথায় মৃত্যুবরণ করবে। সবকিছুই একটি স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ।”
(সুরা হুদ : ৬)
নবীজি (সা.) এর যুগে নারীরা অলঙ্কার পরতেন?
হ্যাঁ, নারীরা অলঙ্কার পরতেন এবং নবীজি (সা.) তাতে নিষেধ করেননি।
এক হাদিসে আছে, ঈদের দিন নবীজি (সা.) নারীদের সদকা দিতে বললে, তাঁরা কানের দুল ও হাতের চুড়ি খুলে সদকা দেন।
(সহিহ বোখারি : ১৪৩১)
এ থেকে বোঝা যায়, অলঙ্কার পরা ছিল স্বাভাবিক। তবে কেউ না পরলে তাতে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা নেই।
সারাংশ:
স্ত্রী নাকফুল না পরলে স্বামীর আয়ু কমে যাবে— এমন ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত এবং ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। এই ধরনের কুসংস্কার সমাজে ধর্মের নামে প্রচলিত হলেও, তা কোরআন-হাদিসের আলোকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ইসলামে অলঙ্কার পরা বৈধ হলেও তা একান্তই ঐচ্ছিক— বাধ্যতামূলক নয়।
প্রয়োজনে আপনি এই লেখাটি পোস্ট, বক্তৃতা বা প্রবন্ধে ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজনে ছোট সংস্করণও করে দিতে পারি।