প্রচলিত ব্যবস্থায় নাকি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, এ নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে রাজনীতিতে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি, যা আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে সংকট বাড়াচ্ছে।
দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি পিআর পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। দলটির মতে, পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বলছে, মানসম্পন্ন নির্বাচনের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে পিআর পদ্ধতি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলও এই পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে পিআর পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে দলগুলোর বক্তব্য রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন মতবিরোধের কারণে আগামী বছরের প্রথমার্ধে সম্ভাব্য সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়েও শঙ্কা জাগছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতার ভাগাভাগিসহ রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য সরকার কিংবা অন্য কারও ওপর চাপ তৈরির জন্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিটি সামনে আনা হয়ে থাকতে পারে। তাদের মতে, পিআর নিয়ে যে যাই বলুক, আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান হওয়া দরকার। কেননা, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য না হলে আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে সংকট তৈরির আশঙ্কা থেকেই যায়।
পিআর পদ্ধতি কী: বাংলাদেশের বর্তমান সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ৩০০টি আসনে আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তথা পিআর হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোনো দল মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবেন। বর্তমানে তিন ধরনের পিআর পদ্ধতির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে—মুক্ত তালিকা পদ্ধতি (দলগুলো ভোটের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে আসন পায়), বদ্ধ তালিকা পদ্ধতি (দল ঠিক করে দেয় কে হবেন সংসদ সদস্য) এবং মিশ্র পদ্ধতি (কিছু আসনে প্রতীকভিত্তিক, কিছু আসনে পিআর ভিত্তিতে নির্বাচন হয়)। দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ এবং ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে পিআর পদ্ধতিতে ভোট হয়।
যেভাবে আলোচনায় পিআর: বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিভিন্ন সময় পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব দেয় কিছু রাজনৈতিক দল। তবে তাতে হালে পানি পায়নি একবারও। তবে ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ধাপে সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে এ পদ্ধতি আলোচনায় আসে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষ উভয় স্থানেই পিআর পদ্ধতির দাবি জানায়। অন্যদিকে, বিএনপি, সমমনাসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এ মতের বিরোধিতা করে। বিশেষ করে নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালুর বিপক্ষে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন বিএনপির প্রতিনিধিরা।
পিআর পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি: পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নেওয়া দলগুলোর যুক্তি হচ্ছে, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে বর্তমানে প্রচলিত ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ (এফপিটিপি) পদ্ধতিতে যে দল বেশি আসনে জয় পায়, তারাই সরকার গঠন করে। কোন দল মোট ভোটের কত শতাংশ পেল, তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। যেমন: ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪০.৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে পেয়েছিল ১৯৩টি আসন, আর আওয়ামী লীগ ৪০.২২ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র ৬২টি আসন পেয়েছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৩০টি আসন পেয়েছিল, আর বিএনপি ৩২.৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পেয়েছিল মাত্র ৩০টি। এমন পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতি চালু থাকলে দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব আরও ভারসাম্যপূর্ণ হতো বলে মনে করে পিআরের পক্ষে থাকা দলগুলো। তাদের যুক্তি, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি ৩০-৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৫০+ আসন পেয়ে থাকে, সেখানে পিআর সিস্টেমে তাদের আসন চলে আসবে ১০০-১২০-এর মধ্যে। এতে দলগুলো স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারবে না।
বিপক্ষে যুক্তি: পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকের যুক্তি বাংলাদেশের জনগণ এ পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত নয়। এ সিস্টেমে সংসদ অনেক দুর্বল হবে। হতে পারে ঝুলন্ত সংসদ। এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সবচেয়ে বড় দল রেকর্ডসংখ্যক বেশি ভোট পেয়েও সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। অন্যদিকে ছোটোখাটো দল কমসংখ্যাক ভোট পেয়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেতে পারে, যা গণতন্ত্রে শোভন নয়।
এ ছাড়া প্রচলিত ব্যবস্থায় ভোটাররা প্রার্থী দেখে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। কিন্তু পিআর পদ্ধতি চালু হলে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেও সংসদে যাবে অন্য জন। পিআর পদ্ধতিতে এমপির সঙ্গে সরাসরি ভোটারের সম্পর্ক থাকে না। ভোটার শুধু ভোট দেন, নেতা নির্বাচন করে দল। অথচ এখনো বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ দিনশেষে মার্কা ও প্রার্থী দেখেই ভোট দেন। তাই পিআর পদ্ধতি তাদের মাঝে অধিকতর হতাশার জন্ম দিতে পারে। এতে তাদের ভোটাধিকার ও পছন্দ ক্ষুণ্ন হবে।
কী বলছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সকালে এক সভায় বলেছেন, বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা চলছে। কিছু কিছু লোক ও রাজনৈতিক দল বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন। অথচ সে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই। অনেকেই খুব জোর গলায় বলছেন যে, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষ তো বোঝেই না যে, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা জানে যে, একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা যাই হোক, সে ভোটের দিন ভোট দেবে। এখন ইনারা (কিছু ব্যক্তি ও দল) বলতে শুরু করেছেন— সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন হবে। কিন্তু সংখ্যানুপাতিক কী জিনিস সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি কিছুটা বোঝার চেষ্টা করি যে, ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে। যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে তারা তাদের প্রার্থী নমিনেশন দেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য। এতে করে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ, যারা তাদের এলাকায় একজন নেতা ও প্রতিনিধি চায়, তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খোঁজা সেটা কোনোমতেই এ পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। এ কারণেই বলেছি যে, নিম্ন কক্ষের পার্লামেন্টে আমরা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আসলে সামনে নির্বাচন নিয়ে নানামুখী তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে। তেমনই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি হচ্ছে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার ‘ষড়যন্ত্র ও কৌশল’। তিনি প্রত্যাশা করেন, নির্বাচন সময়মতোই হবে। এ নিয়ে সংকট হবে না। মানুষ ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে এবং সেই প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেই ভোটই মানুষ দেখতে চায়।
পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিশ্বের ৬০-৬২টি দেশে পিআর পদ্ধতিতে ভোট হয়। আমরাও সবাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যাপারে একমত। কেননা, পিআর পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি, পেশি শক্তি ও কালো টাকার ব্যবহার এবং কেন্দ্র দখলের সুযোগ থাকে না। প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে দলের এমপি নির্বাচিত হবে। এখানে ব্যক্তি নয়, দলের স্বার্থ থাকে। তিনি বলেন, আমরা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি জানাতে থাকব। ‘কেয়ারটেকার সরকার’-এর অধীনে নির্বাচনের দাবি আমরা প্রথম তুলেছিলাম এবং নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। আশাকরি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিও জনগণ মেনে নেবে একদিন।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানালেও রাজপথে কোনো সংঘাত হবে না। কারণ প্রতিটি দলের আর্দশ, দর্শন ও নীতি ভিন্ন থাকবে স্বাভাবিক। ফ্যাসিজম ও স্বৈরতন্ত্র মোকাবিলার একমাত্র নিরাপদ পদ্ধতি হলো পিআর। এ পদ্ধতিতে নির্বাচনে হলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিস্ট হওয়ার সুযোগ পাবে না। বিএনপির পিআর পদ্ধতি নিয়ে আতংকিত হওয়ার তো কিছু নেই। তাদের তো অনেক ভোটব্যাংক ও নির্বাচন হলে ৮০ ভাগ আসন পাবে। জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে তারা ক্ষমতায় যাবে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার নতুন নির্বাচন পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। বিদ্যমান পদ্ধতি এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থায় নানা দুর্বলতা তুলে ধরে দলটির নতুন পদ্ধতির নাম মিক্সড মেম্বার পিআর (এমএমপি)। দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, ইসলামে শাসক নির্বাচনের স্বতন্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে, যা নিঃসন্দেহে সব ব্যবস্থার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। ইসলামী ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় এখন বিকল্প হিসেবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনকে মন্দের ভালো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন মহল ও রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি তুলেছে। তিনি বলেন, উভয় পদ্ধতির নানারকম দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণমানুষের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস তৃতীয় পদ্ধতি তথা এমএমপি প্রস্তাব করেছে। এটিই তুলনামূলকভাবে শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হতে পারে। এতে জনমতের সঠিক প্রতিফলন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভোটারের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, বিশ্বের ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতি চালু আছে। ইউরোপে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড ছাড়া সব দেশেই পিআর পদ্ধতি চালু আছে। দক্ষিণ আমেরিকায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ সব দেশে এমনকি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, আলজেরিয়াতেও পিআর আছে। এ পদ্ধতিতে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়তো আছে। সুতরাং এ বিষয়ে আগে ঐকমত্য দরকার যে, কোন পদ্ধতির পিআর প্রয়োগ হবে। তবে আমরা উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চেয়েছি। ডান-বাম বেশিরভাগ দল উচ্চকক্ষে ও নারী আসনে পিআর পদ্ধতির পক্ষে। তবে দু-একটি দল চায় না।
নিবন্ধিত দলগুলোর অবস্থান কী: অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের তথ্য মোতাবেক দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৫৫টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে ৪টি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। ফলে ৫০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৮টি দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান ২৮টি রাজনৈতিক দলের। ৪টি দল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। অবশ্য কিছু দল আংশিকভাবে পক্ষে। অন্যদিকে নিবন্ধনের বাইরে থাকা বেশকিছু দলও পিআর পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিপক্ষে থাকা দলগুলো মূলত বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী। তবে এর বাইরে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) পিআর পদ্ধতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। মূল ধারার ইসলামী দলের মধ্যে ৫টি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে ও ২টি দল বিপক্ষে এবং ২টি দল অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে জটিলতা বাড়বে, বলছেন বিশ্লেষক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, আঞ্চলিক দল নেই এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নয়। অথচ সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য এ তিনটি শর্ত লাগে। দেশে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে নতুনভাবে জটিলতা তৈরি হবে। সুতরাং পিআর বিষয়ে নির্বাচন ইস্যুতে আরও গভীরভাবে বিশদ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, পিআরের প্রকারভেদ রয়েছে। বিশ্বের ৭০টি দেশের পিআর পদ্ধতি একরকম, আবার অন্যান্য দেশের পদ্ধতি আরেক রকম। অর্থাৎ একেক দেশ একেক পিআর পদ্ধতি অনুরসণ করে।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন বাংলাদেশের দলগুলো বলছে, ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের কথা। এই পদ্ধতি তো প্রতিবেশী ভারতও অনুসরণ করে না। পিআরের আরও দুটি পদ্ধতি রয়েছে। এই মুহূর্তে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে হলে সরকার তো কাজ করতে পারবে না। সুতরাং আরও সময় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে পিআর পদ্ধতির উপযোগিতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সমীচীন বলে মনে হয়।