অধস্তন আদালতে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগবিধি সংশোধনের আগেই পাবনার আদালতে কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালে দুর্নীতি ও অনিয়ম আয়োজনের যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য নয় বলে দাবি করা হয়েছে।
পাবনা আদালতের নেজারত বিভাগের সিনিয়র সহকারী জজ মো. আল ইমরান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, একটি কুচক্রী মহল আইন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ প্রেরণ করে থাকতে পারে। বিচার বিভাগ, পাবনা ওই অভিযোগটি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করছে। উল্লিখিত বেনামি অভিযোগ পত্রটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া ও অসত্য। প্রচলিত আইনি কাঠামোর মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুসৃত বাছাই প্রক্রিয়াকে ‘তড়িঘড়ি নিয়োগ’ নামে অভিহিত করা বা কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেন করার অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মর্মে বিবেচনা করা যায়। এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারের নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনীর উদ্যোগকে সম্মান ও স্বাগত জানিয়ে ইতোমধ্যে উল্লিখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল দৈনিক Max tv bdয় “বিধি সংশোধনের আগেই পাবনার আদালতে ‘তড়িঘড়ি নিয়োগ’ নিয়ে প্রশ্ন” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশের আদালতগুলোতে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধির সংশোধনের কাজ চলমান রয়েছে। ওই বিধি সংশোধনের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগের ক্ষমতা বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের হাতে নেওয়া হচ্ছে। অধস্তন আদালতে জনবল নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এ কারণে গত ১৩ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন অধস্তন আদালতের শূন্য পদ পূরণ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতাও শিথিল করেছে। এতকিছুর পরও পাবনার জেলা জজ আদালতে তড়িঘড়ি করে ১৮টি শূন্য পদে লোকবল নিয়োগ কার্যক্রম চলমান ছিল। আগামী ৯ মে এই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। চলমান এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়ম হতে যাচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে।
জানা যায়, জেলা জজ ও অধস্তন আদালতসমূহ এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতসমূহ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৯ এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির আদালতসমূহ (সহায়ক কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ করা হয়। ওই নিয়োগ বিধি দুটির সংশোধনের কাজ চলমান। গত ৭ এপ্রিল এই বিধি সংশোধনের জন্য তৈরি করা খসড়া অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘নিয়োগবিধি পরীক্ষণ-সংক্রান্ত উপকমিটি’ এটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেবে। জনপ্রশাসনের অনুমোদন সম্পন্ন হলেই আইন মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত নিয়োগবিধির প্রজ্ঞাপন জারি হবে। এর মধ্য দিয়ে নিয়োগের ক্ষমতা চলে যাবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের হাতে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুব দ্রুতই এই নিয়োগ বিধি সংশোধনীর গেজেট জারি হবে। আর গেজেট জারি হওয়ার পূর্বেই লিখিত পরীক্ষা শেষ করা হলে পুরো নিয়োগ পরীক্ষা পাবনা জেলা জজ আদালত কর্তৃপক্ষ শেষ করতে পারবেন। সেজন্য তড়িঘড়ি করে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের কাঠে লিখিত অভিযোগ করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।