চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এক বালু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে পৌরসভা ছাত্রদলের আহ্বায়ক একরাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। প্রতি গাড়ি ৫০০ টাকা চাঁদা দাবির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রদল নেতা একরামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল।
শনিবার (১২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষর করা কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল সভাপতি জাহিদুল আফছার ভূঁইয়া জুয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার ফটিকছড়ি পৌরসভা ছাত্রদলের দায়িত্বশীল পদে থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের ভিত্তিতে কেন স্থায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এ মর্মে নোটিশ প্রাপ্তির পাঁচ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে শোনা গেছে, পৌরসভা ছাত্রদলের আহ্বায়ক একরাম চৌধুরী এক বালু ব্যবসায়ীর সঙ্গে গাড়িপ্রতি চাঁদার ‘দর-কষাকষি’ করছেন। একরাম ওই বালু ব্যবসায়ীকে বলেন, ছোট গাড়ি, বড় গাড়ি একইভাবে হিসাব করতে হবে। কারণ আমি একা নই। আমার সিন্ডিকেটে আরও অনেকেই আছে। তখন ওই ব্যবসায়ীর পাশে থাকা আরেক ব্যবসায়ীকে মোবাইলে কথা বলতে শোনা গেছে। তখন ওই ব্যবসায়ী একরামকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা বৈধভাবে দরপত্রে অংশগ্রহণ করে বালু তুলে বিক্রি করছি।
তখন একরামের কাছে কত টাকা চাঁদা দাবি করছেন তা জানতে চান ওই ব্যবসায়ী। এ সময় একরাম বলেন, গাড়িপ্রতি ৫০০ টাকা দিতে হবে।
তবে একরামকে গাড়িপ্রতি ২০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমরা আগেও (১৫ বছর ধরে) তো এত টাকা দিইনি। তখনও আমরা গাড়িপ্রতি ২০০ করে দিয়েছি। তাহলে এখন কেন ৫০০ করে দিব? তখন একরাম বলেন, তাহলে আপনারা আপনাদের মতো থাকেন। আমরা আমাদের মতো আছি।
এরপর ওই ব্যবসায়ী বলেন, লিমিটের ভেতর কথা বললে ভালো হতো।
এ সময় ওই ব্যবসায়ীকে একরাম শাসিয়ে বলেন, আপনি কথা উল্টো বলছেন। আপনার কথার স্টাইল কিন্তু আরেক রকম। কথা লম্বা করে লাভ নেই। গতরাতে যত গাড়ি গিয়েছে চাইলে সবগুলো আটকাতে পারতাম।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি নিজের নন বলে দাবি করেছেন ফটিকছড়ি পৌরসভা ছাত্রদল সভাপতি একরাম চৌধুরী। তিনি বলেন, এলাকায় আমার রাজনৈতিক অবস্থান ভালো। তাই এসব করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনায় আমি ফটিকছড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।
সংগঠনের কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে একরাম বলেন, জি, আমাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এতে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। আমি সেটির জবাব দিচ্ছি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনি বলেন, পৌরসভা ছাত্রদলের আহ্বায়ক একরাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমরা প্রাথমিক একটা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাকে একটা কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পেলে বিষয়টি সেন্ট্রাল কমিটিকে জানানো হবে। জেলা কমিটি চাইলে যে কারও বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারে না। সেন্ট্রাল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করা হবে। সাংগঠনিক বিষয়ে সেন্ট্রাল কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
এদিকে, একরাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল সভাপতি জাহিদুল আফছার ভূঁইয়া জুয়েল। তিনি বলেন, একরামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। লিখিত জবাবের ওপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নোটিশে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। ওই জবাবের ভিত্তিতেই একরামের বিরুদ্ধে বাকি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে।