মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে ইউনেসকোর স্বীকৃতির কী হবে, প্রশ্ন উঠছে..

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৮ বার পঠিত হয়েছে
মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছবি : সংগৃহীত

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে হওয়া ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শোভাযাত্রাটির নতুন নাম ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ।

তবে একটি প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদল জাতিসংঘের সংস্থার দেওয়া স্বীকৃতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি? বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে এ তথ্য।

পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইউনেসকো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। সেখানে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা অন পহেলা বৈশাখ’ বাংলা বর্ষবরণের আয়োজনটিকে ইউনেসকোর অপরিমেয় বিশ্ব সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতির সনদে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এবার এ শোভাযাত্রা নাম পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলা নববর্ষ উদযাপনে শোভাযাত্রার যাত্রা শুরু ১৯৮৯ সালে, যার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। সেটিই পরে রূপ নেয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়। রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষে চারুকলার সামনে থেকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর শুরু হয় এই শোভাযাত্রা। নানা সাজে, নানা প্রতীকে, বিভিন্ন বয়সী মানুষ এতে অংশ নেন।

নাম পরিবর্তন ঘিরে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়, জেগে উঠেছে নতুন বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ বলছেন সঠিক সিদ্ধান্ত, কেউ কটাক্ষ করছেন এই রদবদলকে। এ বিতর্কে বারবার ফিরে আসছে ইউনেসকোর স্বীকৃতির প্রসঙ্গও। চারুকলার ৮৭ ব্যাচের নাজিব তারেক বিষণ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন তোলেন, ‘একটি নাম, যা ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, জাতিসংঘের তালিকায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিত—সেই নাম পরিবর্তনের প্রয়োজনই বা কেন? এতে মনে হতে পারে, মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে কিছু আর নেই, হারিয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়।’ তার আশঙ্কা, এমন সিদ্ধান্তে হারাতে পারে আয়োজনটির ‘ক্রেডিবিলিটি’—বিশ্বাসযোগ্যতা ও গৌরবের জায়গাটাই হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ইউনেস্কোর একটি কনভেনশন রয়েছে ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল সেইফগার্ডিং নিয়ে, যেখানে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নাম পরিবর্তন নিয়ে সেখানে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। এই প্রসঙ্গে ইউনেসকোর কাছে ইমেইলে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও, এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত কোনো উত্তর মেলেনি। তবে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে থাকা প্রশ্নোত্তর অংশে কিছু সতর্কতার কথা বলা আছে—বিশেষত, কোনো ঐতিহ্য স্বীকৃতির তালিকায় ওঠানোর সময় সম্ভাব্য ঝুঁকি ও জটিলতা কী হতে পারে, সে বিষয়ে। নাম পরিবর্তন তার ভেতরে পড়ে কি না, সেই প্রশ্ন এখনও থেকে যায়।

ঝুঁকিগুলো হলো, অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর – ‘ঐতিহ্যটি থমকে যেতে পারে (বৈচিত্র্য হ্রাস, প্রামাণ্য সংস্করণ তৈরি ও সৃজনশীলতা ও পরিবর্তনের সুযোগ নষ্ট করা ইত্যাদি কারণে), অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারে।’

একই সঙ্গে ঝুঁকির জায়গায় আরও বলা আছে, ‘ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা বদলে যেতে পারে, বিদেশিদের জন্য সরলীকরণ করা হতে পারে, সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের কাছে এর কার্যক্রম ও অর্থ পাল্টে যেতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বর্ষবরণের প্রথম শোভাযাত্রার অন্যতম আয়োজক নাজিব তারেক মনে করেন, এখন বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশ হওয়া শোভাযাত্রার নাম বদলের বিষয়টি জাতিসংঘের সংস্থাটির কাছে নেতিবাচক বার্তা দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর