রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

৪শ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে কালো সোনা..

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫
  • ১৭ বার পঠিত হয়েছে
কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের আবাদ করছেন চাষিরা। ছবি : Max tv bd

ফরিদপুরে দিনে দিনে আবাদ বাড়ছে কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের। চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আছে। কৃষক ন্যায্যমূল্য পেলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কালো সোনা হিসেবে খ্যাত পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে যা গতবারের থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা বেশি।

আকাশছোঁয়া বাজার দরের এই কালো বীজ পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয়। তাই এ বীজকে কালো সোনা বলা হয়। বর্তমানে সারাদেশে পেঁয়াজ বীজের চাহিদা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ জোগান দেয় ফরিদপুরের চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- গত বছর ফরিদপুরে ৯৪৬ টন বীজ উৎপাদিত হয়েছিল যা এ বছর বেড়ে গিয়ে ৯৬৫ টন হতে পারে। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলায় মোট ১৮৫৪ হেক্টর জমিতে এ বছর পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আবাদ হয়েছে ভাঙ্গা উপজেলায়। ভাঙ্গায় ৪৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এরপরে জেলার সদর উপজেলায় ৪৩০, সদরপুরে ৩৮০, চরভদ্রাসনে ১৭৫, মধুখালীতে ১৭০, বোয়ালমারীতে ৯৮, নগরকান্দায় ৫১, সালথায় ৫০ ও আলফাডাঙ্গায় ২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে।

ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজের চাহিদা পুরো দেশে প্রচুর। যার মধ্যে ২৮০ টন স্থানীয়ভাবে ব্যবহার হবে এবং বাকি ৬৮৫ টন সারা দেশে সরবরাহ করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বীজে ভালো লাভ পাওয়ায় এ ফসলের দিকে ঝুঁকছে উদ্যোক্তা ও কৃষক। একইসঙ্গে মাঠে কাজ করে ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবারের শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারছেন দিনমজুর শ্রমিকরা। পেঁয়াজের বীজ খেতে কাজ করে একজন দিনমজুর প্রতিমাসে আয় করছেন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। বছরের অর্ধেক সময় কাজ করা যায়। এতে একজন শ্রমিক প্রতি মৌসুমে প্রায় লাখ খানেক টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।

পেঁয়াজ বীজ চাষিরা জানান, পেঁয়াজ বীজ আবাদে যত্নশীল থাকতে হয়। কোনো রকম অযত্ন হলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষেতে বীজের আবাদ শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরে আর ফলন পাওয়া যায় এপ্রিল-মে মাসের দিকে। ক্ষেত থেকে তোলার পর এক বছর এই বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। কারণ পরবর্তী বছরে গিয়ে কৃষকরা এই বীজটি সংগ্রহ করে ক্ষেতে বপন করে।

ভাঙ্গা উপজেলার ঘাড়ুয়া ইউনিয়নের চৌকিঘাটা গ্রামের শাহ আলম Max tv bdকে জানান বাব দাদর আমল থেকে পেঁয়াজের আবাদ করে আসছি এবার ৪০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি, আল্লাহর রহমতে এ বছর আবহাওয়া খুবই সুন্দর, কীটনাশক কম লেগেছে তাই বাড়তি খরচ কম। অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করি গত বছরের থেকে ভালো ফলন পাব।

ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের খ্যাতনামা কৃষানি শাহিদা বেগম দেড় যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করছেন। স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে উত্তরবঙ্গ এবং ফরিদপুরে ১০০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন, যার মধ্যে ফরিদপুরে ৪০ বিঘা।

শাহিদা Max tv bdকে বলেন, এবার ফলন অত্যন্ত ভালো হবে। এবারের পেঁয়াজের ফুলে দানা এসেছে বেশ ভালো। আবহাওয়া সহায়ক থাকলে বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ পাওয়া যাবে। তবে এ বছর অন্যান্য চাষিরা পেঁয়াজের আবাদ বেশি করায় গত বছরের তুলনায় দাম কম হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি।

শাহিদা বেগমের স্বামী ফরিদপুরের বড় পেঁয়াজ চাষি বক্তার খান জানান, পেঁয়াজ বীজ আবাদে ছোট্ট শিশু পালনের মতোই যত্নশীল থাকতে হয়। কোনো রকম অযত্ন হলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। মৌমাছির সংকটের কারণে পরাগায়নের মাত্রা কমে আসছে। কিন্তু তারপরও তারা হাত দিয়ে পরাগায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। যা প্রাকৃতিক পরাগায়নের তুলনায় কিছুটা কম ফলপ্রসূ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান Max tv bdকে বলেন, এ বছর পেঁয়াজের আবাদ গত বছর থেকে বেড়েছে। আবহাওয়া এখনো অনুকূলে আছে। এভাবে থাকলে এবং কৃষক ন্যায্যমূল্য পেলে এ মৌসুমে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার মতো বীজের উৎপাদন হবে। বীজতলা থেকে শুরু করে পেঁয়াজ উত্তোলন পর্যন্ত আমরা চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সাহায্য দিয়ে থাকি এবং বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনা কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনীর মাধ্যমে বীজ, সার ও কীটনাশক দিয়ে থাকি।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর