ফ্রান্স সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইমামতিকে একটি স্বীকৃত পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশটিতে ইমামদের কাজকে একটি প্রতিষ্ঠিত ও কাঠামোবদ্ধ পেশা হিসেবে গণ্য করা হবে। এছাড়া, ইমামদের পেশাগত দায়িত্ব ও কর্মপরিধি নির্ধারণে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আনাদুলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
রেতাইয়ো এই ঘোষণাটি ফরাসি ইসলাম ফোরামের (এফওআরআইএফ) দ্বিতীয় বৈঠকের সমাপনী অধিবেশনে দেন। ফোরামটি মূলত ফ্রান্সে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য গঠিত একটি সংস্থা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও মুসলিম ধর্মীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপ পারস্পরিক আস্থা ও দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত। এছাড়া, মুসলিমরা যাতে কোনো উগ্র মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত না হয় এবং সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হয়, সেটিই সরকারের মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
ইমামদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও সুবিধা
সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ফ্রান্সের কর্মসংস্থান সংস্থায় ইমামদের জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্মবর্ণনা (জব ডেসক্রিপশন) তৈরি করা হবে। এতে ইমামদের দায়িত্ব, কাজের পরিধি ও পেশাগত শর্তাবলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
এছাড়া, ইমামদের জন্য সরকার নির্ধারিত কর্মসংস্থান চুক্তি (এমপ্লয়মেন্ট কনট্রাক্ট) থাকবে, যা তাদের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ফলে ইমামরা একটি সংগঠিত কাঠামোর মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ
রেতাইয়ো তার ভাষণে ফ্রান্সে ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষ সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ২০২৩ সালে দেশটিতে ১৭৩টি মুসলিমবিরোধী হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এ সমস্যা সমাধানে ফরাসি সরকার একটি নতুন অনলাইন অভিযোগ প্ল্যাটফর্ম চালু করবে। এর মাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষী হামলা বা বৈষম্যের শিকার ব্যক্তিরা সহজেই অভিযোগ জানাতে পারবেন।
সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই স্বীকৃতি মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং ইসলামবিদ্বেষ রোধেও সহায়ক হবে।
তবে কিছু মহল থেকে এ সিদ্ধান্তের সমালোচনাও হতে পারে। কারণ, ফ্রান্সে ধর্মীয় বিষয়ে সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
ফ্রান্সের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি ফ্রান্স সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইমামদের পেশাগত স্বীকৃতি, কর্মসংস্থান সুবিধা এবং ইসলামবিদ্বেষ মোকাবিলায় সরকারের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর প্রতিফলন ঘটায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি যা তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকারকে আরও সুসংহত করবে।