শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

ঢাবিতে ফের শেখ হাসিনার গ্রাফিতি এঁকে রং-কালি-জুতা নিক্ষেপ

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪০ বার পঠিত হয়েছে
নতুন করে আঁকা শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক গ্রাফিতি। ছবি : Max tv bd

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রক্ত-কালি মাখানো এবং জুতার মালা পরানো ঘৃণাসূচক গ্রাফিতির (ঘৃণাস্তম্ভ) একাংশ মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুছে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানানোয় ফের সেই গ্রাফিতি এঁকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর ফের রং, কালি ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়েছে।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী টিএসসিতে জড়ো হয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের জনতা।

এর আগে, রোববার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘খুনি হাসিনার প্রতিকৃতিতে গণজুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি’ ঘোষণা করেন।

এসময় জনতা ‘শেখ হাসিনার দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘আওয়ামী লীগের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘একটা একটা লীগ ধরো, ধইরা ধইরা জেলে ভরো’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলে।

সাদমান আহমেদ তুর্য নামে একজন বলেন, ঘৃণা প্রকাশ করা থেকে আমরা নিজেদের থামাতে পারি না। এই হাসিনা ও এই স্তম্ভ বাংলাদেশের একটি ঘৃণার প্রতীক হিসেবে থাকবে চিরকাল।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, খুনি হাসিনার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের গ্রাফিতি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুছে ফেলা হয়, তারপর আজকে নতুনভাবে সবাই আবার তাদের ক্ষোভ ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। যারা মুছেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি খুনি হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হোক এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হোক।

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, হাসিনার এই ঘৃণা স্তম্ভকে আমরা হারিয়ে যেতে দেব না। আমরা এটাকে বাংলাদেশের সকল স্বৈরাচারের জন্য একটা প্রতীক হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।

জানা যায়, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব চলাকালে টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের পেছনের মেট্রোরেলের পিলারে অঙ্কিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার গ্রাফিতিতে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা রং, কালি, কাঁদা ও জুতা নিক্ষেপ করে (যদিও ৩ আগস্ট থেকেই এই কর্মসূচি শুরু হয়)। পাশাপাশি ছবিতেই জুতার মালা পরিয়ে দেয় এবং ছবি আঁকা এই পিলারের নাম দেয় ‘ঘৃণা স্তম্ভ’। যার ফলে ছবিটি হয়ে যায় প্রতিবাদের একটি প্রতীক এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এর মাঝে, গত শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে গ্রাফিতিটি ক্রেন নিয়ে মুছতে আসে মেট্রোরেলের কিছু কর্মী। এটি মুছে ফেলা অবস্থায় কিছু শিক্ষার্থী তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এই কাজ করা হয়েছে এমন তথ্য জানতে পেরে তারা রাত ২টার পর বিক্ষোভ শুরু করলে সেই মোছার কাজ বন্ধ হয়।

পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসে কেন এটা মুছে ফেলা হচ্ছে এমন প্রশ্ন তোলেন। এর পেছনে কারা জড়িত, কার অনুমতিতে এমনটা করা হচ্ছে, তা তারা জানতে চান। তখন মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে থাকা এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এ কথা শুনে শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি, এ স্তম্ভকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা করার কথা জানান। পরবর্তীতে রাতেই শেখ হাসিনার মুছে যাওয়া গ্রাফিতির অংশে (মুখ) বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবির চারুকলা অনুষদ শাখার সদস্য মৃধা রাইয়ান, ঋষি, রাইয়ান ফেরদৌস ও সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ আরেকটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকেন।

গ্রাফিতি মোছার বিষয়ে রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার নির্দেশনা ছিল বলে একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ। বিবৃতিতে বলা হয়, মেট্রোরেলের দুটি পিলারে থাকা শেখ মুজিব এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক গ্রাফিতি মুছতে গেলে শিক্ষার্থীদের মবের সামনে ভুল বশত অতিরিক্ত পরিচালক জনাব শাহজাহান এর নাম বলে ফেলি। প্রকৃতপক্ষে এনএসআই-এর কারো সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এ ঘটনায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদী বলেন, ইনকিলাব মঞ্চ থেকে একটা উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। হাসিনার আগের ছবিটার একটা বড় রেপ্লিকা বানাবো। সেটা দিয়ে ম্যুরাল বানিয়ে টিএসসিতে স্থাপন করবো। হজে গিয়ে মানুষ যেমন শয়তানকে পাথর মারে, আপনারাও গিয়ে রোজ এই শয়তানরে পাথর বা স্যান্ডেল মারবেন।

এদিকে, গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদের দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা অতি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ২৯ ডিসেম্বর গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে মেট্রোরেলের দুটি পিলারে থাকা শেখ মুজিব এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক গ্রাফিতি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। জুলাই আন্দোলনে এই দুটি গ্রাফিতি বিপ্লব, প্রতিরোধ এবং ফ্যাসিবাদ ধ্বংসের প্রতিনিধিত্ব করে। এই স্মৃতিকে তাজা রাখা এবং প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটি প্রক্টরিয়াল টিমের অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরও সতর্ক থাকার অঙ্গীকার করছি।

এতে আরও বলা হয়, প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে গত রাতেই শিক্ষার্থীরা মুছে ফেলা গ্রাফিতি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এঁকেছেন। এই স্তম্ভটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দিবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার এই ঘৃণাকে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করবে।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর