সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

রূপালী ব্যাংকে ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় মামলা

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪২ বার পঠিত হয়েছে
কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার রূপালী ব্যাংকে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান। ছবি : Max tv bd

কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার রূপালী ব্যাংকে ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানায় মামলা করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। শুকবার (২০ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসি জানান, ব্যাংকে জিম্মি করে টাকা লুট করতে এসে আত্নসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

ওসি আরও জানান, আত্মসমর্পণ করা তিন ডাকাত লিয়ন মোল্লা, আরাফাত ও সিফাতকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের বিকেলে আদালতে তুলে ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হবে।

উল্লেখ বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাংকটির ওই শাখায় অস্ত্রসহ তিন ডাকাত প্রবেশ করে ব্যাংকটির গ্রাহক, কর্মীসহ ১৬ জনকে জিম্মি করে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণের পর তারা দাবি করেছে, কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত এক মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচানোর জন্য তারা এই ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল।

আটক ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে তাদের এই বক্তব্য এখনই আমলে না নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আটকদের একজন হলো গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার কুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিয়ন মোল্লা ওরফে নীরব (২২)। সে পেশায় একজন গাড়িচালক। অন্য দুজনের বয়স ১৬ বছর। তারা হলো মো. আরাফাত ও সিফাত। তারা কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা। তাদের কাছে ব্যাংক থেকে লুট করা ১৮ লাখ টাকা, চারটি খেলনা পিস্তল, দুটি চাকু, একটি লোহার পাইপ, একটি স্কুলব্যাগ, তিনটি মাস্ক, তিন জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস ও তিনটি কালো চশমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এসপি আহম্মদ মুঈদ বলেন, তারা তিনজন গ্রাহক হিসেবে ব্যাংকে ঢুকেছিল। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে একজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা দ্রুত রেসপন্স করে ঘটনাস্থলে যায়। সঙ্গে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও ঘটনাস্থলে যান। এর আগেই স্থানীয়রা ব্যাংকের বাইরে তালা দেওয়ায় ভেতরে ডাকাতরা আটকা পড়ে। এ সময় ব্যাংকের ভেতরে গ্রাহক ও কর্মী মিলে ১৬ জন জিম্মি অবস্থায় ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা ভেতরে থাকা ডাকাতদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। তাদের বুঝিয়ে সবাইকে নিরাপদে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়। দীর্ঘ সময় কথা বলার পর তারা আমাদের কথায় আশ্বস্ত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে।’

মুঈদ বলেন, আমরা তিনজনকে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসি। একই সঙ্গে জিম্মি থাকা ১৬ জনকেও নিরাপদে উদ্ধার করি।

ডাকাতির চেষ্টার ঘটনা নিয়ে গতকাল রাত ৮টার দিকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন এসপি আহম্মদ মুঈদ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা বিদেশি বিভিন্ন সিনেমা ও সিরিজ দেখে অ্যাডভেঞ্চার (রোমাঞ্চকর) অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তবে তাদের দাবি করা কিডনিজনিত অসুখে মৃত্যুপথযাত্রী এক রোগীর চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না, সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

রূপালী ব্যাংকের চিফ সিকিউরিটি অফিসার মেজর (অব.) তারেক আহমেদ Max tv bdকে বলেন, ডাকাতরা ব্যাংকের ভেতর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ছিল। আমাদের কর্মী ও গ্রাহকরা আটকা পড়েন। ক্যাশে থাকা ১৮ লক্ষাধিক টাকা তারা নেয়। কিন্তু পালাতে না পারায় পরে সেই টাকা পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকটির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের (দক্ষিণ) জেনারেল ম্যানেজার মো. ইসমাঈল হোসেন শেখ বলেন, তিনজন গ্রাহকবেশে ব্যাংকে ঢুকেছিল। তারা ক্যাশে যা পেয়েছিল তাই নিয়ে যেতে চেয়েছিল। এ সময় ভেতরে ছিলেন ছয়জন গ্রাহক। অফিসার ছিলেন সাতজন। একজন পিয়ন ও দুজন গার্ড ছিলেন। সবাই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন। ব্যাংকের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জনগণের আমানতের কোনো হেরফের হয়নি। সব সুরক্ষিত আছে।

ডাকাতদের হাতে থাকা অস্ত্রগুলো খেলনা ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন ইসমাঈল হোসেন। গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘আগামী রোববার থেকে যথারীতি ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে। আপনারা নিশ্চিন্তে লেনদেন করতে পারবেন।’

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় হানা দেয় একদল ডাকাত। তাতে ব্যাংকের গ্রাহক ও কর্মী মিলে ১৬ জন ভেতরে জিম্মিদশায় পড়েন। বিকেল সাড়ে ৫টায় তিন ডাকাত আত্মসমর্পণ করে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খালিদুল হক হাওলাদার। তিনি বলেন, জিম্মিদশা থেকে প্রত্যেককেই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বিনা রক্তপাতে তিন ডাকাতকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

ডাকাতদের আত্মসমর্পণের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমরা তাদের সঙ্গে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তাব দিই। নেগোসিয়েশনের একপর্যায়ে তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণের জন্য রাজি হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে নিরাপদে তাদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিই। সেই অনুযায়ী তাদের হেফাজতে নিয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর