শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

ডায়াবেটিসের মাত্রা কত হলে ইনসুলিন দিতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩৬ বার পঠিত হয়েছে
ডায়াবেটি হল কখন ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে এবং কারা নেবেন এ বিষয়ে অনেকেই জানেন না। ছবি: সংগৃহীত

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম না। এদের অনেকেই ইনসুলিন নেন। আর কেউ আছেন ওষুধ সেবন ও নিজের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস মেনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন। ডায়াবেটি হল কখন ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে এবং কারা নেবেন এ বিষয়ে অনেকেই জানেন না। বিবিসির এক প্রতিবেদনে ইনসুলিন নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

ইনসুলিন কী: ইনসুলিন মানবদেহের জন্য এক অপরিহার্য হরমোন, যা অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয়। মানুষ যখন কোনো খাবার খায়, তখন মানুষের শরীর সেই খাবারকে ভেঙ্গে চিনি বা গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে। আর, ইনসুলিন শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয়, সেই চিনিকে গ্রহণ করার জন্য। এই চিনি মানবদেহের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অগ্ন্যাশয় যখন শরীরে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, অর্থাৎ, শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে (গ্লুকোজ) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এমন পরিস্থিতিতে কৃত্রিম ইনসুলিন দিতে হয়।

কখন ইনসুলিন নিতে হবে: কৃত্রিম ইনসুলিন আবিষ্কৃত হয় ১৯২১ সালে। আর তার আগে অনেক ডায়াবেটিসের রোগীরা শরীরে ইনসুলিনের অভাবের কারণে মারা যেতেন। কারণ ইনসুলিন উৎপাদন না হলে রক্তে গ্লুকোজ বাড়তে থাকে। আর গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অভুক্ত অবস্থায় যদি মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ৭ মিলি এর বেশি পাওয়া যায়, তাহলে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হয়। তবে এই মাত্রার গ্লুকোজ থাকলেই রোগীকে ইনসুলিন গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে না। ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি ১৬ দশমিক ৭ মিলি এর উপরে চলে যায়, তখন রোগীকে সাধারণত কৃত্রিমভাবে ইনসুলিন দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে, ইনসুলিন দেয়া হয় ইনজেকশন বা ইনজেক্ট্যাবল কলম বা পাম্পের মাধ্যমে।ইনসুলিন উৎপাদন না হলে রক্তে গ্লুকোজ বাড়তে থাকে। ছবি: সংগৃহীত

ইনসুলিন নিবেন কারা: কেবল রক্তের গ্লুকোজের মাত্রার উপর ইনসুলিন গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে না। রোগী কোনো ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস হয় মূলত দুই ধরনের। এগুলো হলো: টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু ডায়াবেটিস।

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস: এটি  মূলত বংশগত, অর্থাৎ জেনেটিক কারণে হয়। এর জন্য বাহ্যিক কোনও কারণ দায়ী না। সাধারণত তরুণ বয়সে, অর্থাৎ ১৮ বছরের আগেই এটি শুরু হয়। ডায়াবেটিসের এই ধরন দ্বারা আক্রান্ত রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একবারেই থাকে না। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আছে। একজন মানুষের যেকোনো বয়সে এই টাইপটি ধরা পড়তে পারে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খান বলেন, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস তরুণ বয়সে শুরু হয়। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস যাদের, তাদেরকে ইনসুলিন দিতেই হবে। কারণ এই হরমোন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে গ্লুকোজের মাত্রা মুখ্য না। তাকে ইনসুলিন না দিলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

টাইপ টু ডায়াবেটিস: যারা  টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত , তাদের অগ্ন্যাশয়ে যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। অথবা, এই হরমোনটি ঠিক মতো কাজ করে না।পৃথিবীতে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি এবং এই রোগীদের ক্ষেত্রে অনেকসময় চিকিৎসকরা ইনজেক্ট্যাবল ইনসুলিন দিয়ে থাকেন।

ড. খান বলেন, একজন টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগী, যার শরীরে ইনসুলিন আছে; কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত না। তখন তাকে ঔষধ, ডায়েট, এক্সারসাইজ দেয়া হয়। কিন্তু এগুলা দিয়েও যখন তার সুগার কন্ট্রোল করা যায় না, তখন তাকে বাইরে থেকে ইনসুলিন দেয়া হয়। ডায়াবেটিসের প্রথম ধরনটি তরুণ বয়সে দেখা গেলেও, দ্বিতীয় ধরন দ্বারা সাধারণত মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর