অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের পথে হাঁটছে উল্লেখ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সরকারকে সবুজ সংকেত দিলে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে একজন ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা পাবে। শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বাউফল ফাউন্ডেশন কর্তৃক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, গুণীজন ও কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাউফল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় না এবং ক্ষমতা ধরে রাখার দায়িত্বও নেয়নি। নির্বাচনের মাধ্যমে যারা বিজয়ী হবে তারা সরকার গঠন করবে। নির্বাচিত সরকারের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, অতীতে রাষ্ট্রীয় খরচে দলীয় লোকজনকে হজ করানো হতো। এবার সেটি বন্ধ হচ্ছে। জনগণের আমানত রক্ষায় কাউকে রাষ্ট্রীয় খরচে হজ করানো হবে না। শুধু হজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রীয় খরচে যেতে পারবে। ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত কৃর্তী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বাউফল উপজেলার যে কোনো ধর্মের ১০০ হতদরিদ্র শিক্ষার্থীকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এককালীন বৃত্তি দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে তিনি বাউফল ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীলদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে আহ্বান জানান।
জুলাই বিপ্লবে বাউফলের ৬ শহীদ ও ২ শতাধিক আহত বীরদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ ও আহতরা আামদের জাতীয় সম্পদ। জাতি তাদের চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। সভাপতির বক্তব্যে বাউফল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল কারিগর হচ্ছে ইসলাম। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ইসলামের বিকল্প অন্য কিছু নেই এবং থাকতে পারে না। মানব রচিত আইনে গত ৫৩ বছর বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছে কিন্তু সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হয়নি। বরং সমাজের স্তরে স্তরে বৈষম্যের বেড়াজাল সৃষ্টি হয়েছে।
পাশাপাশি তিনি বলেন, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় আগামীর বাংলাদেশে সাড়ে ৪ লাখ মানুষের বাউফল হবে এক পরিবার। যেখানে ধর্মের কোনো বিভাজন থাকবে না। সবাই নাগরিক মর্যাদায় এক পরিবারের সদস্য হবে। ব্যক্তির সংস্কার ব্যতীত রাষ্ট্রের সংস্কারে সমাজে সুফল আসবে না। সেজন্য বাউফল ফাউন্ডেশন ব্যক্তির সংস্কার করে আদর্শিক ও চরিত্রবান মানবিক মানুষ হিসেবে গড়তে কাজ করছে। বাউফল ফাউন্ডেশন সত্যিকার অর্থের গুণীজনদের সম্মাননার আয়োজন করেছে। যেখানে কোনো দল-মত, ধর্ম-বর্ণের বিচার করা হয়নি। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ গুণীজনদের সম্মান না দিয়ে দলীয় চোর-ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসীদের গুণীজন সাজিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করেছে। রাষ্ট্রের একজন গুণীজনও আওয়ামী লীগের শাসনামলে সম্মাননা পায়নি।
আগামীর বাংলাদেশ গুনীজনদের দ্বারা পরিচালিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে গুণীজনদের ভোট দিবেন নাকি চোর-ডাকাতকে ভোট দিবেন সেটা বাউফলবাসীকেই ঠিক করতে হবে। এমন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করুন যিনি আপনার প্রতিনিধিত্ব করবে, আপনার শাসক হবে না। যিনি জনগণের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করবে না। আর কোনো চোর-ডাকাত বাউফলবাসীর নেতার আসন দখল করলে কাঙ্ক্ষিত বাউফল গঠন সম্ভব হবে না। তাই তিনি আল্লাহ ভীরু ব্যক্তিকে বাউফলবাসীর নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত করতে আহ্বান জানান। বাউফল ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেড় শতাধিক কৃতী শিক্ষার্থীকে ও জুলাই বিপ্লবে ৬ শহীদ পরিবারকে এবং বাউফল উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ২১ গুণীজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন সংবর্ধিত সবার হাতে সম্মাননা তুলে দেন।