সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে আয়া থেকে বিপুল সম্পদের মালিক ও ২ শতাধিক আত্মীয় স্বজনকে সরকারি চাকুরী নিয়ে দিয়েছেন এই — মুক্তা রানী,

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪
  • ৩৭ বার পঠিত হয়েছে

ঠাকুরগাঁওয়ে আয়া থেকে বিপুল সম্পদের মালিক ও ২ শতাধিক আত্মীয় স্বজনকে সরকারি চাকুরী নিয়ে দিয়েছেন এই — মুক্তা রানী,

মোঃ মজিবর রহমান শেখ,
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,
স্বামী মারা যাওয়ার পরে দিগ্‌বিদিক শূন্য হয়ে পড়েন মুক্তা রায়। চাচাতো ভাই দুলালের মাধ্যমে আয়া পদে চাকরি শুরু করেন, সিভিল সার্জন অফিসে। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ‘সখ্যতা’ গড়ে ওঠে সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ৪ বছর চাকরি করে ছেড়ে দেন সেই চাকরি। মুক্তা রায় থেকে হয়ে ওঠেন মন্ত্রী-এমপির ‘দ্বিতীয় বউ’ খ্যাত মুক্তা সেন। শুরু হয় মুক্তা সেনের কোটিপতি হওয়ার উত্থান। কয়েক বছর আগেও যার নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যেত সেই মুক্তা এখন শতকোটি টাকার মালিক। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চকহলদি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তা রানী। কোর্টে মুহুরি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তার স্বামী। যা আয় হতো তা দিয়ে সংসারে সব সময় ছিল টানাপড়েন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে ২ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আয়া পদে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। পরে আয়া পদ থেকে চাকরি ছেড়ে নজর দেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাসপাতালের কেনাকাটা, খাবার, আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া শুরু হয় তার। তারপর থেকে হাসপাতালের সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হয়ে ওঠেন হাসপাতালের রানী মুক্তা সেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, রেন্ট-এ কার সেন্টারের শোরুম, ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের ইসলামবাগে দোতলা বাড়ি, শান্তিনগরে ২ জায়গায় প্লট আকারে ৫ শতক করে জমি, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলএসডি গোডাউনের পাশে ১০ শতক জমি, পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের পাশে ৩ পিএম চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাদুপাড়ায় বাড়ি-জমি ও সয়াবিন তেলের কারখানা, চন্ডিপুরে জমি সহ বাড়ি, মিল-চাতাল ও পুকুর ২ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা অগ্রিম, আবাদি জমি রয়েছে ২০ বিঘা। সদরের গড়েয়া বাসস্ট্যান্ডে ৮ শতক জমির ওপরে বাড়ি। এ ছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্য, জমি দখল সহ নামে-বেনামে সম্পত্তি ও বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ডার রয়েছেন তিনি। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নওগাঁর অটো রাইস মিল কয়েক কোটি টাকায় কিনেছেন এই মুক্তা সেন।
চলতি বছরে মুক্তা সেনের ২ ছেলে তূর্য ও মাধুর্য এন্টারপ্রাইজ নামে পূবালী ব্যাংক হিসাব নম্বরে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৩৮ লাখ ২০৯৯ টাকা। সাবেক মন্ত্রী ও এমপি রমেশ চন্দ্র সেন আটক হওয়ার পর দিন সব টাকা তুলে নিয়ে বর্তমানে রয়েছে ৬ হাজার ৪১৭ টাকা। এ ছাড়াও জনতা, অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকেও তাদের হিসাব নম্বরে ২ বছরে লেনদেন রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। নিজের আখের গুছিয়ে ক্ষান্ত হননি এই মুক্তা সেন। ভাইদের রাজনীতিতে যুক্ত করে ঠিকাদারি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেওয়া । আর
ভাতিজা-ভাতিজিদের সরকারি চাকরিও নিয়ে দিয়েছেন এই মুক্তা সেন। হত্যা মামলায় ভারতে পলাতক থাকা বড় ভাই নারায়ণ ঠাকুরকে এসে যুক্ত করান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। মন্ত্রীর প্রভাব আর রাজনৈতিক দাপটে তারা হয়ে ওঠেন আরও প্রতাপশালী। তার খালাতো ভাই দুলালকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খালাতো বোনের ছেলে নিপুণকে হাসপাতালের ঠিকাদারি, বোনের মেয়ে মৌকে স্কুলের শিক্ষিকা, আরেক বোনের ছেলে জয়কে ফোর্স সহ রাজস্ব ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি দিয়েছেন তার ২ শতাধিক আত্মীয়স্বজনকে। মুক্তা রায়ের খালাতো ভাই ফণি রায় বলেন, সবাই আমাকে বলে মন্ত্রী আর এমপি নাকি আমার ভগ্নিপতি। আমি বলেছি বিয়ে তো খেলাম না। তবে মুক্তার পারিবারিক অবস্থা খারাপ ছিল। শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। পরে নিজে বাড়ি কিনেছে। আমাদের আত্মীয়স্বজনের চাকরি নিয়ে দিয়েছে। এলাকায় কিছু জমি কিনেছে। স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা সবাই তাকে ‘এমপির দ্বিতীয় বউ’ হিসেবে চিনতাম। ভালোই জমিজমা কিনেছেন। তার ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনদের চাকরি দিয়েছেন। তাদের বংশের সবার চাকরি হয়েছে। এলাকার স্কুলগুলোতে অনেককে চাকরি দিয়েছেন। তার বিনিময়ে টাকা নিয়েছেন, আবার কারও কাছে জমি নিয়েছে। পাশেই মিল চাতাল পুকুর ২ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা গত মাসে অগ্রিম দিয়েছেন। মুক্তা রানীকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ২০১০ সালে মুক্তা রায় আয়া পদে যোগদান করেন। পরে ২০১৪ সালে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক বলেন, আয় বহির্ভূত সম্পদ উপার্জনের কোনো সুযোগ নেই। কেউ এসবে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
০১৭১৭৫৯০৪৪৪

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর