শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৫ অপরাহ্ন

সাতক্ষীরা ল স্টুডেন্টস ফোরাম নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩
  • ৩৮৭ বার পঠিত হয়েছে

সাতক্ষীরা ল স্টুডেন্টস ফোরাম নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি :জিএম জাফর

পাঁচ জন নির্বাচন কমিশনারের তিনজনকে ঘিরে আপত্তি
সরকারি চাকরিজীবী, মামলার আসামিরা, জামায়াত শিবিরের ব্যক্তিরা হয়েছেন প্রার্থী
প্রতিবাদ জানানোই ছাত্রলীগের নেত্রীসহ তার পরিবারকে হুমকী
নাজমুল শাহাদাৎ জাকির: সাতক্ষীরা ল স্টুডেন্টস্ ফোরামের নির্বাচনে সরকারি চাকরীজীবী ও জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রার্থী হওয়াতে জেলা জুড়ে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে জামায়াত- শিবির রাজনৈতিকভাবে মাঠে দাঁড়াতে না পারায় তারা কৌশলের অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা ল কলেজের ছাত্র সংগঠন ” ল স্টুডেন্টস ফোরাম” নির্বাচনে নিজেদের কর্মীদেরকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এ ধরনের একটি প্লাটফর্মে জামায়াত-শিবিরের সমর্থিত ব্যক্তিরা প্রার্থী হওয়ায় ভবির্ষতে এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সংগঠিত হয়ে মরণ কামড় দিতে পারে। যেটা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ জুলাই সাতক্ষীরা ল স্টুডেন্টস ফোরামের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এবং ৩১ জুলাই পাঁচ জনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। যার প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয় প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহাব উদ্দীন সাজুকে। নির্বাচন কমিশনের অপর চারজন হলেন প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি নাজমুল হক, সাবেক সহ-সভাপতি জান্নাতুল নাহার, সাবেক সভাপতি এসএম বিপ্লব হোসেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম। ঘোষিত ৫জন নির্বাচন কমিশনারের ভিতরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ তিনজন নির্বাচন কমিশনার করে আপত্তি তোলেন ল কলেজের শিক্ষীর্থীরা। আর এ সংক্রান্ত কারনে গত ২৭ আগস্ট ল স্টুডেন্টস ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ওই তিন নির্বাচন কমিশনারের প্রত্যারের দাবি জানিয়ে  অভিযোগ দায়ের করেন ল কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী।

এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্বাক্ষরিত একপত্রে গত ১৭ আগস্ট সাতক্ষীরা ল স্টুডেন্টস ফোরামের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে। যেখানে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রকাশ ২১ আগস্ট, ভোটার তালিকার উপর আপত্তি ও সংশোধন ২৩ আগস্ট, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৩ আগস্ট, মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও জমাদান ২৬ আগস্ট, যাচাই-বাছাই ২৮ আগস্ট, খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ২৯ আগস্ট, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ২ সেপ্টেম্বর, ভোট গ্রহণ ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে ঘোষিত ৩৯৫জনের ভোটারতালিকা নিয়ে রয়েছে প্রার্থীদের আপত্তি। যেটা নিয়ে গত ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ল স্টুডেন্টস ফোরামের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন আতিক নামে এক প্রার্থী। তবে এসবের মধ্যদিয়ে অভিযোগের তোয়াক্কা না করে নির্বাচনের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে চলেছে ল স্টুডেন্টস ফোরামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনাররা। অভিযোগ রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অপর এক নির্বাচন কমিশনারকে সাথে নিয়ে গত ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় ল স্টুডেন্ট ফোরামের নির্বাচনে সাধারণ-সম্পাদক প্রার্থী হুমায়ন কবির রায়হান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবুল হাসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী কাজী মারুফ হাসান সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করেন। যেটা নিয়েও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ল স্টুডেন্ট ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর।

এছাড়া খোজঁ নিয়ে জানা যায়, ল স্টুডেন্টস ফোরামে সভাপতি প্রার্থী ফিরোজ আলী সরকারি চাকরি করেন। তিনি কলারোয়া উপজেলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি সম্পাদক পদে পদপ্রার্থী নাহিদ হাওলাদারও সরকারি চাকরি করেন। তিনি শ্যামনগর উপজেলা মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের অফিস সহকারী।  এছাড়াও সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রার্থী সদানন্দ কুমার সরকার, সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী  হুমায়ুন কবির রায়হান, যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবুল হাসান, যুগ্ম-সম্পাদক প্রার্থী সানজিদা অহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী কাজী মারুফসহ অর্থ সম্পাদক প্রার্থী হাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম রাহিসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্টর অভিযোগ রয়েছে। এদের ভিতরে অনেকের নামে নাশকতার মামলাসহ প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলা মামলার আসামীদের আপনজন বলে জানা গেছে।

জামাত-শিবির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ল স্টুডেন্ট ফোরামের নির্বাচনে অংশ নেয়াতে আশঙ্কা ব্যক্ত করে গেল সপ্তাহে সাদিয়া পারভীন নামে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে প্রতিবাদ করেন। সেখানে তিনি জানান, ‘শিবির রাজনৈতিকভাবে মাঠে দাঁড়াতে পারছে না। সেক্ষেত্রে তারা কৌশলের অংশ হিসেবে অরাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে নিজেদের কর্মীদেরকে ঢুকিয়ে নিচ্ছে। এবং এই সমস্ত সংগঠনের ব্যানারে তারা তাদের মতাদর্শ প্রচার করছে। এবং এদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে সাতক্ষীরা শহরের প্রতিষ্ঠিত কিছু স্বাধীনতা বিরোধী বিতর্কিত ব্যক্তি। বর্তমানে জামাত- শিবিরের জন্য চাহিদা সম্পন্ন অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ল কলেজের ছাত্র সংগঠন ” ল স্টুডেন্টস ফোরাম” । প্রশাসন এবং যুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি যদি এখনই সচেতন না হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এরাই বিষফোড়া হয়ে দাঁড়াবে। জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নির্বাচনের ঠিক আগে এ ধরনের একটি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সংগঠিত হয়ে মরণ কামড় দিতে পারে।’ ওই পোস্টের পর নড়েচড়ে বসে অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে অভিযুক্তের হুমকীর মুখে সাদিয়া পারভীন ফেসবুক থেকে ওই পোস্টটি সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাদিয়া পারভীন নিজেই। পোস্ট সরিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘ বর্তমানে আমি  সৌদি আরবে বসবাস করি। দেশে আমার অসুস্থ্য মা, বোনসহ দুইটা সম্তান রয়েছে। পোস্টটি করার পর থেকে বিভিন্নভাবে অভিযুক্তরা আমাকেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকী-ধামকী দেয়া শুরু করে। নিজ পরিবারের মায়া সন্তান হিসেবে আমার ভিতরে কাজ করে। একারনে, অভিযুক্তদের হুমকীর মুখে এবং নিজ পরবারকে বাঁচাতে পোস্টটি সরিয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে কে বা কারা হুমকী দিয়েছে সেটা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ল স্টুডেন্টস ফোরাম নির্বাচনের একাধিক প্রার্থীরা বলেন, এখানে ৫জন নির্বাচন কমিশনার তিন জনই বিতর্কিত। সবকিছু আয়নার মতো পরিষ্কার। কেন বা কোন ক্ষমতা বলে তাদের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা সেটা আমরা জানিনা। তবে, আমরা ল স্টুডেন্টস ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ও ল কলেজের অধ্যক্ষ এড. এসএম হায়দার বরাবর একটি অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছি। বিষয়টা যদি সুরহা না হয় তাহলে নির্বাচন বর্জনসহ আমাদের অবস্থান থেকে কঠোরভাবে আন্দোলনে যাবো।

এব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী শাহাব উদ্দীন সাজু গণ্যমাধ্যমে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, মিডিয়ার জন্য আমাদের একজন নির্বাচন কমিশনার রয়েছেন। যিনি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিবেন বলে জানান।

পরে অপর নির্বাচন কমিশনার নাজমুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান। তিনি জানান, আমাদের নীতিমালাতে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই যেখানে সরকারি চাকরীজীবীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এটা একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের মতো। একারনে এখানে ল কলেজের যেকোন (অধ্যায়নরত) শিক্ষার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে বলে জানান তিনি। জামাত-শিবির ও মামলার আসামিরা নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখানে কে জামাত-শিবির,  কে আওয়ামীলীগ বা ভিন্ন কোন দল করে কিনা সেটা মুখ্য বিষয় না। আমরা যেটা দেখি সে এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যায়রণরত রয়েছেন কি না। যুব মহিলা লীগের নেত্রী সীমা ছিদ্দিকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওনি একটি রাজনৈতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এবং বিগত ল স্টুডেন্ট ফোরামের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এখন ওনি যদি রাজনৈতিক দলের নেত্রী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন তাহলে জামায়াত-শিবির কেন নই? বলে প্রতিবেদকের কাছে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন তিনি।

প্রার্থী কিংবা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, যদি কারও অভিযোগ থাকে সেটা আমাদেরকে জানাতে হবে। তবে আমাদের কাছেতো কেউ অভিযোগ দেইনি। স্বয়ং নির্বাচন কমিশরার নিয়ে প্রার্থীদের আপত্তি রয়েছে বলে জানালে তিনি এব্যাপারে কোন কিছু জানেননা বলে প্রতিবেদককে অবগত করেন।

এব্যাপারে ল স্টুডেন্টস ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ও ল কলেজের অধ্যক্ষ এড. এসএম হায়দারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর