সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিপকে হেনস্তা করতে গর্ভপাতের অভিযোগ

প্রতিবেদকের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩
  • ২৬৩ বার পঠিত হয়েছে

মোঃ মজিবর রহমান শেখ,
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় ফড়িংগা দীঘি এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ৩ মাসের মাথায় তার গর্ভপাত হয়েছে বলে দাবী কামাল ও নূরবানু দম্পতির। তবে সদর হাসপাতাল ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার তথ্যে নূরবানুর গর্ভে সন্তানের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সম্পুণ্য মিথ্যা বানোয়াট কথাদিয়ে সাজানো হয়েছে মামলা দাবী আসামী পরে।
সরজমিনে জানা গেছে, প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিবাদ রয়েছে কামাল-নূরবানু দম্পতির। বিবাদের জেরে উভয় পরে সংঘাতকে কেন্দ্র করে গত ১ জুন প্রতিপরে বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন নূরবানুর ভাই আবুল কালাম আজাদ। মামলার অভিযোগপত্রে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে নূরবানুর গর্ভবতী থাকা ও প্রতিপরে সঙ্গে মারামারির সময় আঘাতপ্রাপ্ত হলে রক্তরণ হয়ে গর্ভপাতের দাবী করা হয়। প্রমাণস্বরূপ ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন দেখিয়েছেন এই দম্পতি। তবে নূরবানুর গর্ভপাতের প্রতিবেদনে উল্লেখিত ঠিকানায় বা আশপাশে ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাব’ নামক কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই নামের সঙ্গে মিল থাকা একটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়। যার নাম ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার। ঐ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রেজিস্ট্রি খাতা দেখালে সেখানেও পাওয়া যায়নি ৩১ মে বা আগে পরে নূরবানুর কোনো আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীা করার তথ্য।
এই বিষয়ে জানতে নূরবানুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মারামারির ঘটনার সময় আমি অচেতন হয়ে যাই। আমাকে হাসপাতালে নেওয়া এবং বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) রাকিবুল আলম বলেন, ঐ নারী হাসপাতালে ভর্তি হন। সমস্যা হিসেবে বলেন তার জরায়ু দিয়ে রক্তরণ হচ্ছে এবং তিনি তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার পেটে লাথি মারা হয়েছে। এরপর হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে ৫টি পরীক্ষা দেন। হাসপাতাল কর্তৃপরে দাবি, সব পরীক্ষা গুলো হাসপাতালেই করা যেত। তানা করে তারা ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ল্যাবে স্বেচ্ছায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। বাকি চারটি পরীা হাসপাতালে করান।
ঐ ল্যাবের প্রতিবেদনে রেফারেন্স জায়গায় ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের নাম উল্লেখ থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপ বলছে পরীক্ষা -নিরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা হয়নি। এদিকে রাণীশংকৈল উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র রায়ের দেওয়া তথ্যমতে, সে খানকার রেজিস্ট্রি খাতা অনুযায়ী নূরবানু গত ৪ বছর থেকে নিয়মিত জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করে আসছেন। তিনি এমনই একটি প্রত্যয়ন দিয়েছেন। প্রত্যয়নে বলা হয়, নুরবানু গর্ভবতী ছিলেন না। তার বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন ইউনিয়ন মাঠকর্মী বৃষ্টি রাণী।
অভিযুক্ত আব্দুল জব্বারের স্ত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা হয়রানি করছে। এখন আমার স্বামী কারাগারে। প্রতিপ এ সুযোগে আমাকে বিভিন্ন সময় হুমকি ও হেনস্তা করছে। গ্রামের বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ এর বিচার চাই। আসামিপরে আইনজীবী ফরিদ শেখ বলেন, এ মামলায় আমি ঐ পরিবারকে আইনি সহায়তা করছি। মামলার কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছে, এটির সত্যতা কম। পরবর্তী আগামী ১৩ তারিখ মামলার শুনানি আছে। আমরা যাবতীয় নথি আদালতে পেশ করবো।
এ বিষয়ে জানতে রাণীশংকৈল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গুলফামুল ইসলাম মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষটি তিনি অবগত আছেন এবং এ বিষয়ে বাদীপক্ষ ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাব’ একটি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। সে নামে হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত রিপোট আমাদের কাছে চেয়েছে। উক্ত মামলার আইও সে বিষয়ে সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করে রিপোট দিবেন। আর বাকি বিষয়গুলোও তদন্তাধীন আছে বলে আমি জানি।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি গ্রহণ করে বা তাদের দেওয়া বড়ি কেউ নিয়মিত খেলে তার গর্ভবতী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং কোনো সরকারি হাসপাতালের বেসরকারি ক্লিনিকবা ডায়গনস্টিক সেন্টারে রেফার্ড করার কোনো নিয়ম নেই।

মোঃ মজিবর রহমান শেখ
০১৭১৭৫৯০৪৪৪

এই নিউজটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও খবর